বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আট দফা দাবিতে একটি গণসমাবেশ করেছে। সংগঠনটি সম্প্রতি সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং মন্দিরে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে।
বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া এই সমাবেশে বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের প্রতিনিধিরা শঙ্খ বাজিয়ে এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত হন। অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্মল বিশ্বাসসহ অন্যদের সঞ্চালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রদীপ ক্রান্তি দে বলেন, ৯ আগস্ট থেকে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে সেটা বন্ধ করার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। আমাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় বসার নয়, দেশকে অস্থিতিশীল করার নয়। আমরা কেবল অধিকারের জন্য এসেছি। আমাদের আট দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্যই আমরা সংগ্রাম করছি। এসময় সমাবেশে যেন রাষ্ট্র বিরোধী এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেওয়া হয় সেজন্য সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
অ্যাডভোকেট সুশান্ত অধিকারী বলেন, বর্তমান সরকার পতনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বেড়ে গেছে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন।
সমাবেশে প্রধান বক্তা চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পরও বাঙালি জাতি একটি আদর্শিক ইতিহাস তৈরি করতে পারেনি। এটি আমাদের জন্য লজ্জার এবং ভবিষ্যতের জন্য আতঙ্কের। এর নিরসন হওয়া জরুরি। আমাদের প্রত্যেকের লেজুড়বৃত্তির মানসিকতাই আজকের এ বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, আপনারা বলেছেন, এ দেশে সহিংসতা হচ্ছে না, রাজনৈতিক নিপীড়ন হচ্ছে। তাহলে দুর্গাপূজায় কেন মাদ্রাসার ছাত্রদের নামিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন? এতেই প্রতীয়মান হয় এ দেশের সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, আমাদের যে হিন্দু উপদেষ্টা হলেন, তিনি আজও কোনো মন্দির পরিদর্শনে যাননি, কোনো ক্ষতিগ্রস্তের পাশে দাঁড়াননি। হিন্দুদের স্বার্থে, সংখ্যালঘুদের স্বার্থে কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাহলে কাকে হিন্দু প্রতিনিধি বানানো হয়েছে?
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে এই নেতা বলেন, পৃথিবীতে আপনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, এ শান্তি স্থায়ীভাবে বিপন্ন হবে। এই দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। রাজনীতি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হবে। গণতন্ত্র ও সহাবস্থানের জন্য প্রতিটি ধর্মের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে সমুন্নত করতে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিন।
১. নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান।
২. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
৩. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন।
৪. ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা।
৫. দেবত্তোর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার আইন প্রণয়ন।
৬. সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ।
৭. সংস্কৃত পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন।
৮. শারদীয় দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের জন্য ছুটি।
উক্ত গণ-সমাবেশে অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নির্মল বিশ্বাস, প্রসেনজিৎ কুমার হালদার, রাজেশ নাহা, পিযুষ দাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে ছিলেন চট্টগ্রাম আর্ন্তজাতিক ভাবনামৃত সংঘ, ইস্কন-এর সাধারণ সম্পাদক লীলারাজ ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম পুন্ড্ররিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, শ্রীমং রবীশ্বানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমং স্বরুপ দাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীমং গোপীনাথ দাস ব্রহ্মচারী, প্রফেসর চন্দন সরকার, সুমন গোস্বামী পুলক। বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রসেঞ্জিত কুমার হালদার, রনি রাজবংশী, দেবব্রত সরকার, জাগো হিন্দু পরিষদের চট্টগ্রামের টিটু শীল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ হিন্দু পরিষদের সাবেক হিন্দু পরিষদের বিকাশ চন্দ্র দাস, নারায়ন গঞ্জ জেলা সভাপতি প্রকৌশলী উত্তম কুমার দাস, হিন্দু যুব পরিষদের সাতক্ষীরা জেলার সভাপতি মনোদীপ মন্ডল, নির্মল বিশ্বাস, প্রদীপ কান্তি দে, সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি সাজেন কৃষ্ণ বল, বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক-এর এডভোকেট সুশান্ত অধিকারী, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ কেন্দ্র কমিটির সভাপতি দিপঙ্কর সিকদার দীপু, মুখপাত্র সাজন কুমার মিশ্র, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সভাপতি আশীষ চন্দ্র দাশ, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুমন কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত অধিকারী, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন এর মহাসচিব সাংবাদিক শ্যামল কান্তি নাগ, সারদাঞ্জলী ফোরামের মহানগর সভাপতি রতন চন্দ্র পাল ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন পাল।
উক্ত মহাসমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করেন জাগো হিন্দু পরিষদ হরিজন ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান পরিষদ, ভক্ত সংঘ সোসাইটি, ভক্ত সংঘ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম, সুহৃদ বাংলাদেশ।
সমাবেশে একাত্মাপ্রকাশ করে আরো বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, হিন্দু যুব মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি গৌতম হালদার প্রান্ত, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ও বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট বিধান বিহারী গোস্বামী, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী দাস, প্রমুখ।
সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারের প্রতি তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।