সকল গুঞ্জন ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন। রোববার (৮ জুন) দিবাগত রাত দুইটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি অবতরণ করে। গত মাসের বুধবার (০৭ মে) দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি দেশ ছাড়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
তবে, তার দেশত্যাগকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির এই সফর পূর্বনির্ধারিত ছিল কি না এবং সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিনা?
আব্দুল হামিদের এই হঠাৎ দেশত্যাগের পরপরই প্রশাসনের কয়েকটি স্তরে জবাবদিহিতা ও তদন্তের নির্দেশ আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, তার নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়।
এছাড়া, ঢাকা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে কিশোরগঞ্জে আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক এবং এসবির একজন সহকারী উপ-পরিদর্শককেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে একটি পুলিশি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে সরকার উচ্চপর্যায়ের তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সি আর আবরার। সদস্য হিসেবে রয়েছেন পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
তারা সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের পটভূমি, প্রশাসনিক ত্রুটি ও আইনি জটিলতা খতিয়ে দেখবেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা দেশত্যাগ করেন। এরপর তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই নানান অভিযোগে মামলা হয়।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি, কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল -সহ মোট ১২৪ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার বাদী তহমুল ইসলাম (২৭), কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর লতিবাবাদ এলাকার আবু তাহের ভূঁইয়ার পুত্র। তিনি নিজেকে বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করেছেন। অভিযোগে তিনি জানান, আন্দোলনের সময় পুলিশি হামলায় গুরুতর আহত হন এবং দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে, জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার মাধ্যমে তার বিদেশে অবস্থান নিয়ে চলা বিতর্ক আপাতত কিছুটা স্তিমিত হলো।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবদুল হামিদ ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবদুল হামিদ ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।