বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (৮৩) গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কারাগার থেকে দ্রুত বিএমইউ-তে নেওয়া হয়। প্রথমে সিসিইউ-তে ভর্তি করা হলেও পরে শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁকে আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা মুহূর্তেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায়। এতে তাঁর অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং শোক প্রকাশ করতে থাকেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ খবরকে নিছক গুজব বলে নিশ্চিত করা হয়। তাঁরা জানান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এখনও জীবিত এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। পরিবারের সদস্যরা গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া কামনা করেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সহধর্মিণী আয়শা সুলতানা এক আবেদনে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এই ক্রান্তিকালে তাঁর স্বামীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে যেন দ্রুত জামিন প্রদান করা হয়। তিনি জানান, ৫ আগস্ট মধ্যরাতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) সিসিইউতে ভর্তি করে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আয়শা সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা ও ধীর পদক্ষেপের কারণে দেশের একজন প্রবীণ নাগরিক বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আয়শা সুলতানা তাঁর আবেদনে আরো উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মারাত্মক নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, কিডনি রোগসহ নানা জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এবং এই রোগসমূহ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সাবেদুর রহমান সমু জানান, "আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। গুজবে কান না দিয়ে ওনার জন্য দোয়া করুন।"
মেজ পুত্র, সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, "আমার বাবা, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এবং ডাক্তারদের যথাযথ তত্ত্বাবধানে আছেন। যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের আমরা আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি যেন তারা এ থেকে বিরত থাকেন। তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করুন।"
চিকিৎসা ও মানবিক বিষয়ক প্রশ্ন?
একজন মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ রাজনীতিক এবং দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধিত্বকারী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বর্তমান চিকিৎসা পরিস্থিতি ও জামিন সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, মানবিক বিবেচনায় তাঁর জামিন ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে প্রবীণ এই নেতার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন অনেক বিশিষ্টজন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৭ অক্টোবর (২০২৪) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সূত্র মতে, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর পল্টন এলাকায় বিএনপির কর্মসূচির সময় কর্মী মকবুল হোসেন নিহত হন। এই ঘটনায় বিএনপি কর্মী মাহফুজার রহমান গত ৩০ সেপ্টেম্বর পল্টন মডেল থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাতেই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।