খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় সহিংস সংঘর্ষে তিনজন পাহাড়ি নাগরিক নিহত হয়েছেন। দুষ্কৃতকারীদের এই হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরীসহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের আগে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং ১৪৪ ধারা জারি করে পুরো এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামসু বাজার এলাকায় ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। অবরোধকারীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ও টায়ারে আগুন দিয়ে পিকেটিং করছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবরোধকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। অবরোধকারীরা সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিস, দোকানপাট, বসতঘর ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে।
এ বিষয়ে গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী জানান, "পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে ১৪৪ ধারা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে।"
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক বলেন, "আমরা সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।"
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর বাবা। পরদিন সন্দেহভাজন এক যুবক শয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপর দুই অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়।
এদিকে, ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, "খাগড়াছড়ির ঘটনায় জড়িত কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তপূর্বক দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। সকলকে ধৈর্য ধারণ ও শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।"
বর্তমানে গুইমারা ও আশপাশের এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।