ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার: দেশ ও প্রতিবেশীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

ডেস্ক প্রতিবেদক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২.০২ পূর্বাহ্ন

আপডেট : বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২.৩৫ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 77732 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 77732 জন
মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার: দেশ ও প্রতিবেশীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
-- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গ্রাফিক: দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ।।


ঢাকার গুলশানে সম্প্রতি ভারতের কলকাতার বাংলা দৈনিক ‘এই সময়’- পত্রিকার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরের (আলমগীর) একান্ত সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে নানা তথ্য যা দৈনিক ‘লাল সবুজ বাংলাদেশ’ অনলাইনে হুবহু তুলে ধরা হলোঃ


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির ‘এই সময়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া তথ্য অনুসারে ঢাকার গুলশানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ইতিহাস ও ভূগোলের কারণে ভারত বাংলাদেশকে অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে আসছে এবং এ অবস্থা সহজে বদলাবে না। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ধরন আগের থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র হবে। তিনি নয়া দিল্লির ভাবনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামিকে একইসঙ্গে বন্ধনীর মধ্যে দেখা ভুল বলেও মন্তব্য করেছেন।


সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতা এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, দেশের স্বাধীনের স্বার্থ এবং নিরাপত্তা নীতির ওপর জোর দিয়ে তিনি ভবিষ্যতে একটি সতর্ক ও আত্মনির্ভর নীতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি ভারতকে একটি সতর্ক বার্তাও দিয়েছেন, যেখানে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন কাঠামো এবং পারস্পরিক স্বার্থের কথা গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে।


মির্জা ফখরুলের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন আসছে, যেখানে ভারতকে অবহেলা করা সম্ভব নয়, তবে বাংলাদেশের স্বাধীন নীতি ও জাতীয় স্বার্থও অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে তার মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ এখন আরও সক্রিয় ও আত্মনির্ভর হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়।


সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জন্যই গুরুত্ববহ বার্তা বহন করে, যা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভাবনায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। 


এই সময়: আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কি আদৌ হবে? জামায়াতে ইসলামি এবং এনসিপি যে ভাবে একটার পরে একটা নতুন দাবি তুলছে, এবং সেগুলো পূরণ না হলে নির্বাচন হতে দেবে না বলছে, অনেকেই সংশয়ে। হলেও দেশজুড়ে প্রবল অশান্তি ও রক্তপাত হবে?


আলমগির: আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে। সংশয়ের কোনও জায়গা নেই। কোনও অশান্তি হবে না। মানুষ ভোটাধিকার ফেরত চাইছেন, নির্বাচন চাইছেন। উৎসবের মতো ভোট হবে ফেব্রুয়ারিতে।


এই সময়: জামায়াত যে বলছে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া ভোট হবে না, এনসিপি প্রচলিত সংবিধান বাতিল করে আগে গণপরিষদের নির্বাচন চাইছে। না হলে ভোট হতে দেবে না বলছে...


আলমগির: জামায়াত ভোটে আসবে। পিআর–টিআর নয়, মানুষ যে পদ্ধতিতে ভোট বোঝেন, সেই প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে বাংলাদেশের ভোট। জামায়াতও দেখবেন অংশ নেবে। আর এনসিপি-কে আমরা কোনও শক্তি বলেই আর মনে করি না। এটা ঠিক এই ছাত্ররাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের বারুদে আগুনটা দিয়েছিল। এখন আর তাদের কিছু নেই। ডাকলে লোকও আসে না।


এই সময়: শোনা যায়, এনসিপি নাকি আপনাদের কাছে আসন চেয়েছিল?


আলমগির: না। এনসিপি কখনও চায়নি। তবে জামায়াত চেয়েছে। এনসিপি-র এখন একমাত্র লক্ষ্য, বিএনপিকে সরকার গঠন করতে না-দেওয়া।


এই সময়: জামায়াত ৫০টা আসন চেয়েছে?


আলমগির: ৩০টা চেয়েছে। আমরা উৎসাহ দেখাইনি। অনেক কম একটা সংখ্যার কথা বলেছি, যা তাদের মনঃপূত হয়নি। আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেবো না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পিআর-টিআর সবই বিএনপির উপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে। আসলে দেশের প্রবল ভাবেই মানুষ নির্বাচন চাইছেন। সেনাবাহিনী চাইছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও চাইছেন।


এই সময়: নির্বাচনের বিষয়ে ইউনূসের উপরে আপনি আস্থা রাখছেন? কিছু দিন আগেও তো তাঁর বিরুদ্ধে এনসিপি-র প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন আপনারা। তিনি নির্বাচন করাতে চান না, এমন কথাও বলা হয়েছে।


আলমগির: পরিস্থিতি বদলেছে। দলের পক্ষে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলি। দেখছি, এখন তিনি সর্বোচ্চ সিরিয়াস। আন্তরিক ভাবেই চান ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক। অগস্টের ৫ তারিখে ইউনূস নির্বাচনের দিন ঘোষণা করলেন। তার আগের দিন রাতে ইউনূস সাহেবের বাসভবনে তাঁর ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়–জামানের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়।


সেনাপ্রধান বলেন, পুলিশ কম বলে এক বছর ধরে সেনাদের রাস্তায় ডিউটি করতে হচ্ছে, যা একেবারেই কাম্য নয়। তিনি ডিসেম্বরে ভোটের কথা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে আপত্তি নেই। সব রকম সহযোগিতা করবেন। তিনি চান, নির্বাচন করিয়ে বাহিনী এ বার ব্যারাকে ফিরুক। ইউনূসও বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অব্যাহতি চান তিনি। বলেছেন, আর চাপ নিতে পারছেন না। আমরাও আশ্বাস দিয়েছি, সরকার গঠনের পরেও সংস্কার চলবে। স্বৈরাচারীদের বিচার প্রক্রিয়াও চলবে। তিনটি আলাদা বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও ম্যান্ডেট নেই, তাদের সংস্কারের গুরুত্বই বা কী! নতুন কথা তারা বলেনি। বিএনপির ৩১ দফায় সবই আছে।


এই সময়: সম্প্রতি যে দিন জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর হলো, তার পরের দিন বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি নেতৃত্বকে বাসভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ইউনূস। কেন? তিনি কি কোনও বিশেষ বার্তা দিলেন আপনাদের?


আলমগির: (খানিক চুপ করে থাকার পরে) ঠিকই বলেছেন। সে দিন ইউনূস আমাদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। সে বার্তা সংক্ষিপ্ত, এক লাইনের। এক ধরনের ফাইনাল বেল বলতে পারেন। ইউনূস সে দিন আমাদের জানিয়ে দেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বাস ধরতে না পারলে তিনি মার্চ থেকে আর থাকবেন না। এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, যাতে ভোটটাই করা গেল না।


এই সময়: আওয়ামি লিগ কি আগামী ভোটে অংশ নিতে পারবে? জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বা ওয়ার্কার্স পার্টির মতো তাদের শরিকেরা?


আলমগির: আমরা বলেছি আওয়ামি লিগ ও তাদের শরিকেরা সবাই, এমনকি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নিক। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হোক। এ জন্য অনেকে আমাকে ভারতের এজেন্ট, আওয়ামির দালাল বলে গালাগাল দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার অপকর্ম আমরাও কেন করব? হাসিনা ১৫ বছর প্রতিপক্ষকে ভোটে দাঁড়াতেই দেননি, তার শাস্তি পেয়েছেন। একই কাজ করলে আমরাও তো প্রতিফল পাব। তবে মানুষ এত রক্ত দেখেছেন, এত প্রাণহানি— তাঁদের মধ্যে আওয়ামি-বিরোধিতা রয়েছে।


এই সময়: ইউনূস বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রভাব ছাড়া নির্বাচন ও সরকার গঠন হবে। সত্যিই কি বাংলাদেশে ভারতের কোনও প্রভাব আর অবশিষ্ট নেই?


আলমগির: ভারত মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। সেই সময়ে এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। ভৌগোলিক ভাবেও বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, এক দিকে সাগর। সুতরাং ভারতের প্রভাব বাংলাদেশে থাকবেই। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বলতে শুধু আওয়ামি লিগকে বুঝেছে ভারতের শাসকেরা।


আওয়ামি লিগের ভাষ্য মেনে বিএনপি আর জামায়াতকে একই বন্ধনীতে ফেলেছে। জামায়াত আর বিএনপির রাজনীতি তো এক নয়। আমরা অসাম্প্রদায়িক, মধ্যপন্থী একটি গণতান্ত্রিক দল। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সংবিধান রক্ষায় আজও আমরা স্বাধীনতা-বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছি। বামেরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে।


এই সময়: পঁচিশ বছর ধরে জামায়াত আপনাদের শরিক। দুটো নাম তাই এক সঙ্গে উচ্চারিত হয়।


আলমগির: ভুল। আওয়ামি লিগ এই অপপ্রচারটা ভারতকে বিশ্বাস করিয়েছে। তারা শুধুই নির্বাচনী শরিক। তারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, আমরা করি না। আসলে আওয়ামির চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে।


-বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি। আজ আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তীব্র ভারত-বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষে আমি আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর সুবিধা নিতে দেবো না। আমরা চাই, ভারত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। আমরা কলকাতা যাব, কলেজ স্ট্রিট থেকে কত বই কিনেছি। আবার সেই সুযোগ পাব। সিনেমা, থিয়েটার দেখব। মানুষে মানুষে অবাধ যোগাযোগ হবে। ভিসা প্রক্রিয়া সাবলীল হবে। ভারতীয়রাও বাংলাদেশ স্বাগত। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক।

ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে চলতি মাসের ৪ তারিখে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরের সঙ্গে অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সংগৃহীত- ‘এই সময়’ থেকে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

ডেস্ক প্রতিবেদক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২.০২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২.৩৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ