রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বাসিন্দা সমীর মণ্ডলের স্ত্রী জয়ন্তী মণ্ডল (৩৩) ও তাদের তিন বছর বয়সী মেয়ে প্রতিভা মণ্ডল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত সপ্তাহে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। জয়ন্তী রবিবার সকালে এবং তার মেয়ে প্রতিভা পরের দিন সন্ধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ৬৯৭ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৮১ শতাংশই তিন দিন বা তার বেশি জ্বরে আক্রান্ত থাকার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ডেঙ্গু মৃত্যুর প্রধান কারণ বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ সেহাব উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে কেউ কেউ মেঝেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
তবে হাসপাতালের ভ্যাপসা গরম ও শয্যা সংকট রোগীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মিরপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসা রেশমা খাতুন বলেন, “শয্যা না থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছি, হাসপাতাল থেকে মশারি বা চাদরও দেওয়া হয়নি।” বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেক ডেঙ্গু রোগী, কিন্তু মশারি না থাকায় তাদের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে এ অবস্থা বিরাজ করছে। নার্সরা জানান, বৃদ্ধ ও শিশু রোগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। শিশুদের জ্বরের তীব্রতা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যত্নের অভাব দেখা দিচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, “ডেঙ্গুর বিস্তার এখন শুধুমাত্র ঋতু পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার প্রজনন মৌসুম দীর্ঘায়িত হয়েছে। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আবহাওয়াভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ পূর্বাভাস মডেল জরুরি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ অন্য কোনো রোগেও ভুগছিলেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে দ্রুত হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ভর্তি হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সরকারি হাসপাতালের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে রোগীরা ভালো পরিবেশে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায় আছেন, কিন্তু শয্যা সংকট, গরম, মশারির অভাব ও নোংরা পরিবেশে রোগীর অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।