‘ভিটে মাটি ছেড়ে এই দেশে এসেছি। আমাদের কোনো কিছুর কমতি ছিল না সেখানে, অথচ আজ ত্রিপলের নিচে জীবন কাটাতে হচ্ছে।’ কথাগুলো বলছিলেন উখিয়ার কুতুপালং ৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন উল্লাহ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের মংডুর সিকদার পাড়া থেকে মা-বাবাসহ ৭ দিন পায়ে হেঁটে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। সেই দিন থেকেই শুরু হয় ইতিহাসের অন্যতম বড় শরণার্থী সংকট।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এবং মিয়ানমারে আরকান আর্মি ও জান্তা সরকারের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত ১৮ মাসে রাখাইনের মংডু ও বুথিডং থেকে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, গত পাঁচ দিনে ৩০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, "জিরো টলারেন্স নীতিতে সীমান্তে নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে।"
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ২৪ আগস্ট শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। আজ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় এবং সম্মেলন সেই প্রচেষ্টার অংশ।"
রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার জুবায়ের বলেন, "ড. ইউনূস আমাদের আশা জাগিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। আমরা চাই সম্মানের সঙ্গে ফিরে যেতে।"
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর যোগাযোগ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, "সংকটের সমাধান নিহিত মিয়ানমারে। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যাবে।"
এই সম্মেলনকে সামনে রেখে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এবং ৬ ডিসেম্বর কাতারে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তুতিও চলছে।