ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

বন্ধ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্রের প্রকল্প

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১.২৩ পূর্বাহ্ন

আপডেট : বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১.২৩ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 322513 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 322513 জন
বন্ধ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্রের প্রকল্প

স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল দেশের প্রথম মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গঠনের। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র’ প্রকল্পের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পই আলোর মুখ না দেখেই বাতিলের সিদ্ধান্ত পেয়েছে। অর্ধেকেরও কম কাজ করে থেমে যাওয়া এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা এখন গচ্চা যাওয়ার পথে। সম্প্রতি একটি মূল্যায়ন সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রতিনিধিরা প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে একমত হন। 


গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সচিব ড. কাইয়ুম আরা বেগম। তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ আর এগোবে না—এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থাপিতব্য এই কেন্দ্রটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মাধ্যমে ২০২১ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়, যার শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেলেও প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩ দশমিক ১২ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ১৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকে। 


পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, প্রকল্প গ্রহণের সময় মূল সমস্যা ছিল সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা। বিশেষ করে প্রকল্পের অবস্থানগত সংকট বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০২০ সালের ২১ জুন কর্কটক্রান্তি রেখা ও ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার সংযোগস্থল চিহ্নিত করে প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, এই ছেদবিন্দু প্রতিবছর প্রায় ১৫ মিটার করে দক্ষিণ দিকে সরে যাচ্ছে। এর ফলে প্রকল্পটির বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। 


মূল্যায়ন সভায় সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) উপপ্রধান মেহেদী হাসান বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন যথাযথভাবে হয়নি এবং ব্যয়ের হিসাবেও রয়েছে অসামঞ্জস্য। কিছু খাতে অনুমোদনের চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে, যার ব্যাখ্যা প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্প পরিকল্পনায় উল্লেখ ছিল, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের ডোমটি ভূমি থেকে ১৭২ ফুট উচ্চতায় থাকবে। কিন্তু এত উঁচু ডোম স্থির রাখতে ভিত্তিমূল দৃঢ় করতে গেলে ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে যেত, যা আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে অবাস্তব হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু প্রকল্প এলাকায় কৃত্রিম আলো ও উচ্চ আর্দ্রতার প্রভাবে টেলিস্কোপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণও কার্যকর হতো না। ফলে প্রকল্পটি বাস্তব প্রয়োগের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়, জনস্বার্থেও নয়। তার মতে, প্রকল্পটি কীভাবে অনুমোদন পেল, তা তদন্ত হওয়া উচিত। তিনি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন।



পরিকল্পনা কমিশন ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা হিসেবে বলেছে, এমন প্রকল্প গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারিগরি দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়া অধিগ্রহণ করা ১০ একর জমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং কেনা যন্ত্রপাতি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে হস্তান্তর করতে হবে।


প্রকল্প পরিচালক খোকন কান্তি সাহা বলেন, মহাকাশ গবেষণার মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, সে কারণেই কাজ এগোয়নি। স্থাপত্য নকশা, ডোম টাওয়ারের উচ্চতা, কৃত্রিম আলো, আর্দ্রতা ও সূর্য-অবস্থান পরিবর্তনের মতো কারণগুলো প্রকল্পটির কার্যকারিতা হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সব মিলিয়ে, দেশের প্রথম মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের স্বপ্ন এখন পরিণত হয়েছে একটি ব্যর্থ প্রকল্পের উদাহরণে, যা দক্ষতা, পরিকল্পনা ও বাস্তবতা বিবেচনায় ঘাটতির পরিণতি হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১.২৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১.২৩ পূর্বাহ্ন