ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা মোড় নিতে পারে কোন দিকে?

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১.০৯ পূর্বাহ্ন

আপডেট : রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১.১০ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 806955 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 806955 জন
ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা মোড় নিতে পারে কোন দিকে?

২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মূলত পর্যটকদের নিশানা করে এই হামলা চালানো হয়। এই ঘটনার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।


সীমান্তের একদিকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ দাবি জোরালো হয়েছে, আবার অন্যদিকে ‘সমুচিত জবাব’ দেওয়ার দৃঢ? সংকল্প গৃহীত হয়েছে।


এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, উত্তেজনার সবচেয়ে বিপজ্জনক অধ্যায় কি ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে?

এই প্রশ্নের পেছনে রয়েছে অতীতের উরি ও পুলওয়ামা হামলার স্মৃতি। দুই ক্ষেত্রেই ভারত আন্তঃসীমান্ত অভিযান চালিয়েছিল, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।


পুলওয়ামা হামলার পর ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালায়, যার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিমান ধ্বংস এবং একজন পাইলটকে আটক করার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে বড় সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।


পেহেলগামে হামলার জন্য এখন পর্যন্ত ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেনি, যা অতীতের ঘটনাগুলোর তুলনায় ভিন্ন। তবে ভারত সরকার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা আকার-ইঙ্গিতে অনেক কিছু বলছে।


কাশ্মীরের অনন্তনাগ পুলিশ সন্দেহভাজন হামলাকারীদের স্কেচ প্রকাশ করেছে, যেখানে দুইজন পাকিস্তানি নাগরিক থাকার অভিযোগ উঠেছে। এখন পর্যন্ত নিশ্চিত প্রমাণের অভাবে ভারত সরাসরি অভিযোগ করেনি, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে, যা রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য আরো উসকে দিচ্ছে।


ভারত ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত : পেহেলগামে হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে—সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত, ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ, ভিসা সুবিধা প্রত্যাহার এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করা হয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে—সিমলা চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ, বাণিজ্য স্থগিত এবং ভারতের ওপর আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একই সঙ্গে ভারতীয় প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ও তাদের সহকর্মীদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সতর্ক করে বলেছে, যদি ভারত পানিপ্রবাহ বন্ধ করে বা অন্যদিকে চালিত করে, তবে তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে এবং পাকিস্তান পূর্ণ শক্তিতে এর জবাব দেবে। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি এত দিন যাবৎ যুদ্ধ ও সংকটের মধ্যেও বহাল ছিল। কিন্তু ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত একটি বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছে—পানির মতো মৌলিক সম্পদও এখন কৌশলের অংশ হতে পারে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে এবং তার কাছে এমন তথ্য রয়েছে যে ভারত বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় সশস্ত্র তৎপরতা বাড়াতে পারে। তিনি সতর্ক করেছেন, এমন হলে পাকিস্তান প্রতিটি নাগরিকের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে।


বিশেষজ্ঞদের মতামত : বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা মারাত্মক সংকটের দিকে এগোচ্ছে। পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘পেহেলগামে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু এবং ভারতের সিদ্ধান্ত—বিশেষ করে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা—প্রমাণ করে যে পরিস্থিতি আর সাধারণ উত্তেজনায় সীমাবদ্ধ নেই।’ সাবেক মার্কিন কূটনীতিক এলিজাবেথ থারলকেল্ড বলেন, ‘সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা অনেক বেশি, তবে কখন এবং কিভাবে তা হবে তা স্পষ্ট নয়।’ তিনি আরো বলেন, যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং এতে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাত আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। গত ২৫ বছরে একাধিকবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল, যেমন ২০০১ সালে সংসদ হামলা ও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পর। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার প্রতিক্রিয়াতেও দুই দেশ সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল।


বর্তমান উত্তেজনার বিশেষত্ব : বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের উত্তেজনার ভিন্নতা হলো কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পানিসম্পদের ব্যবহার। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমির জিয়া মনে করেন, পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক পদক্ষেপ নিলে পাকিস্তান কড়া জবাব দেবে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন। তিনি আরো বলেন, ভারতের মিডিয়া ও রাজনৈতিক আবহ পাকিস্তানবিরোধিতায় আবর্তিত হওয়ায় ভারতীয় নেতৃত্বের ওপর চাপ বেড়েছে, আবার পাকিস্তানেরও ভারতের কর্মকাণ্ডের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য নিজস্ব চাপ রয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন ভারত ও পাকিস্তান নিজেরাই এই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের খুব কাছের এবং পাকিস্তানেরও।’ ট্রাম্প হামলাকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিলেও দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনাকে ‘চিরাচরিত’ বলে উল্লেখ করেন। বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ থারলকেল্ড বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত কার্যকর মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারবে না, কারণ ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গভীর হচ্ছে এবং পাকিস্তানের ওপর প্রভাব কমছে।’


ভবিষ্যতের সম্ভাবনা : কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অতীতের শিক্ষা কাজে লাগানো গেলে উত্তেজনা আর বাড়বে না। সাবেক সিনেটর মুশাহিদ হুসেন সৈয়দ মনে করেন, ‘ভারত বুঝতে পেরেছে যে সামরিক পদক্ষেপ কূটনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।’ আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আহমের বিলাল সোফি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভারতের পদক্ষেপগুলো প্রতীকী থাকবে এবং পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হবে না।


সর্বশেষ বিশ্লেষণ : কুইন্সি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক অ্যাডাম ওয়েনস্টেইন বলেন, কাশ্মীরে হামলা পরিকল্পিত হোক বা না হোক, পশ্চিমা সরকারগুলো ভারতকে পুরোপুরি সমর্থন করার আগে প্রমাণ চাইবে।

তিনি সতর্ক করেন, এই পরিস্থিতি দুই দেশের মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি সংক্রান্ত বিরোধ আরো বাড়াতে পারে।

ওয়েনস্টেইন আরো বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা, বাণিজ্য বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করতে পারবে না যদি তারা একে অপরের বিরুদ্ধে এ ধরনের উত্তেজনায় ব্যস্ত থাকে।’


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১.০৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১.১০ পূর্বাহ্ন