ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

মুহুরীর চর: এক দশক পরও বাংলাদেশের অধিকার অনিশ্চিত

সীমান্ত নির্ধারণে ভারতের অনীহা ও কৌশলগত দখলচেষ্টা!
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদন | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ফেনী
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ১.৩৫ পূর্বাহ্ন

আপডেট : শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ১.৩৭ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 540087 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 540087 জন
মুহুরীর চর: এক দশক পরও বাংলাদেশের অধিকার অনিশ্চিত
ছবি- ইন্টারনেট।


বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহলের সফল বিনিময়ের মাধ্যমে বহুল আলোচিত স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হলেও, ফেনীর মুহুরীর চর নিয়ে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এখনো মীমাংসিত হয়নি। এক দশক আগে যৌথ জরিপে সীমানা নির্ধারণ সত্ত্বেও ভারতের অনীহা এবং কৌশলগত ভূমি দখলের অভিযোগ ঘনীভূত হচ্ছে।

মুহুরীর চর—ফেনীর পরশুরাম উপজেলার একটি ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ, যা এক সময় কৃষিজমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো, এখন পরিণত হয়েছে ভূ-সংকটের প্রতীক হিসেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১১ সালের স্থলসীমান্ত প্রটোকলের আওতায় নির্ধারিত সীমান্তের চেয়ে অতিরিক্ত জমি বাংলাদেশকে হস্তান্তর হচ্ছে—এই অজুহাতে ভারত বিশেষ করে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার আপত্তি জানিয়ে আসছে।

জমির উপর স্থায়ী দখলের কৌশল

স্থানীয়রা বলছেন, ভারত অত্যাধুনিক প্রকৌশল পদ্ধতিতে মুহুরী নদীতে গ্রোয়েন ও স্পার নির্মাণ করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করছে। এতে মুহুরী নদীর মোহনা ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। নদীর পশ্চিম অংশে নতুন চরের সৃষ্টি হলেও তা এখন কার্যত ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে। এই কৌশলে চরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ভারতের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।


স্থায়ী পিলার না হওয়ায় চাষাবাদ বন্ধ

২০১৪ সালে উভয় দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ের যৌথ জরিপে ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত করে অস্থায়ী কাঠের পিলার বসানো হয়। জরিপ দল জানিয়েছিল, অন্তত ৬০-৭০ একর জমি বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু স্থায়ী পিলার স্থাপন না হওয়ায় এখনো বাংলাদেশের নাগরিকরা সেখানে চাষাবাদ তো করতেই পারছে না, এমনকি প্রবেশও করতে পারছে না।


নিরাপত্তাহীনতা ও চোরাচালানের রুটে পরিণত

সীমান্ত নির্ধারিত না হওয়ায় মুহুরীর চর হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি ও অনুপ্রবেশকারীদের নিরাপদ রুট। মাদক পাচার, সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং সীমান্ত অপরাধ বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। বিলোনিয়া স্থলবন্দর সংলগ্ন এই জনপদে সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারি কম থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে উভয় দেশের জন্যই।


আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে গড়িমসি

২০১৭ সালে বিএসএফ মহাপরিচালকের ঢাকায় সফরের সময় মুহুরীর চর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে কৌশলগত ও প্রশাসনিক অজুহাতে বারবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণেই বিষয়টি অমীমাংসিত থাকছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর।


রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় হাজারো জীবন-জমির ভবিষ্যৎ

ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. পারভেজ মিয়া বলেন, “দুই দেশের যৌথ জরিপে সীমান্ত নির্ধারণের পর আমরা অস্থায়ী পিলার বসিয়েছি। কিন্তু ভারত এখন তা মেনে নিতে গড়িমসি করছে, ফলে বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া আর সমাধান সম্ভব নয়।”


রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাবে ঝুলে থাকা প্রান্তিক মানুষের অধিকার

পরশুরাম উপজেলার জমি হারানো শতাধিক পরিবার আজও নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। মুহুরীর চর নিয়ে সীমান্ত নির্ধারণে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, সীমান্ত রক্ষীদের ব্যর্থতা এবং ভারতের কৌশলগত আগ্রাসন প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে ২০১১ সালের ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তির কার্যকারিতা।


সাবেক চাষি মো. ইয়াসিন বলেন, “আমার বাবার জমিতে আজ আমি পা রাখতে পারি না। সরকার যদি চুপ করে থাকে, আমরা কোথায় যাব?”


মুহুরীর চর এখন শুধুই একটি জমি নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সক্ষমতার এক জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ বিরোধ শুধু নিরাপত্তা নয়, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদন | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ফেনী
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ১.৩৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ১.৩৭ পূর্বাহ্ন