News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/2Nr
স্থানীয়রা বলছেন, ভারত অত্যাধুনিক প্রকৌশল পদ্ধতিতে মুহুরী নদীতে গ্রোয়েন ও স্পার নির্মাণ করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করছে। এতে মুহুরী নদীর মোহনা ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। নদীর পশ্চিম অংশে নতুন চরের সৃষ্টি হলেও তা এখন কার্যত ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে। এই কৌশলে চরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ভারতের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০১৪ সালে উভয় দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ের যৌথ জরিপে ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত করে অস্থায়ী কাঠের পিলার বসানো হয়। জরিপ দল জানিয়েছিল, অন্তত ৬০-৭০ একর জমি বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু স্থায়ী পিলার স্থাপন না হওয়ায় এখনো বাংলাদেশের নাগরিকরা সেখানে চাষাবাদ তো করতেই পারছে না, এমনকি প্রবেশও করতে পারছে না।
সীমান্ত নির্ধারিত না হওয়ায় মুহুরীর চর হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি ও অনুপ্রবেশকারীদের নিরাপদ রুট। মাদক পাচার, সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং সীমান্ত অপরাধ বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। বিলোনিয়া স্থলবন্দর সংলগ্ন এই জনপদে সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারি কম থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে উভয় দেশের জন্যই।
২০১৭ সালে বিএসএফ মহাপরিচালকের ঢাকায় সফরের সময় মুহুরীর চর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে কৌশলগত ও প্রশাসনিক অজুহাতে বারবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণেই বিষয়টি অমীমাংসিত থাকছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর।
ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. পারভেজ মিয়া বলেন, “দুই দেশের যৌথ জরিপে সীমান্ত নির্ধারণের পর আমরা অস্থায়ী পিলার বসিয়েছি। কিন্তু ভারত এখন তা মেনে নিতে গড়িমসি করছে, ফলে বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া আর সমাধান সম্ভব নয়।”
পরশুরাম উপজেলার জমি হারানো শতাধিক পরিবার আজও নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। মুহুরীর চর নিয়ে সীমান্ত নির্ধারণে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, সীমান্ত রক্ষীদের ব্যর্থতা এবং ভারতের কৌশলগত আগ্রাসন প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে ২০১১ সালের ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তির কার্যকারিতা।
সাবেক চাষি মো. ইয়াসিন বলেন, “আমার বাবার জমিতে আজ আমি পা রাখতে পারি না। সরকার যদি চুপ করে থাকে, আমরা কোথায় যাব?”
মুহুরীর চর এখন শুধুই একটি জমি নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সক্ষমতার এক জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ বিরোধ শুধু নিরাপত্তা নয়, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।