ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানতে চান অনুদানের টাকা কোথায়

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২.৩৩ পূর্বাহ্ন

আপডেট : শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২.৩৩ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1129775 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1129775 জন
বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানতে চান অনুদানের টাকা কোথায়
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার (ফাইল ছবি)

২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বঙ্গবাজার মালিক সমিতির ফান্ডে ৬ কোটি ২১ লাখ টাকা অনুদান আসে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে মোট ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ২৯৬১ জন ব্যবসায়ীর মাঝে বণ্টন করার কথা ছিল। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও অনুদানের কোনও টাকাই দেওয়া হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।


বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন পর্যন্ত কোনও সহযোগিতা পাননি। এমনকি তাদের সহযোগিতার জন্য আসা অনুদানও তারা পাননি। তবে কর্মচারীরা এবং অল্প সংখ্যক ছোট ব্যবসায়ী সামান্য কিছু তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। প্রশ্ন হলো– ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য দেওয়া অনুদানের টাকা কোথায় গেলো? কেন সেই টাকা ব্যবসায়ীদের মাঝে বণ্টন করা হয়নি তা জানতে চায় বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।


বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন দোলন গার্মেন্টসের মালিক মো. মুহিন।  তিনি বলেন, ‘আমার ২১৮৫-৮৬-৮৭ এই তিনটি দোকান পুড়েছে। এতে এক কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনও সহযোগিতা পাইনি। শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য টাকা দিয়েছে। সেই টাকাও আমরা পাইনি। পরিবার চালাতে আমরা এখন হিমশিম খাচ্ছি। একেকজনের কাঁধে লাখ লাখ টাকার ওপরে ঋণ। কারও ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। বঙ্গবাজারে আমরা যারা ব্যবসা করতাম, তাদের সবার কাঁধেই ঋণের বোঝা।


এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, পত্র-পত্রিকা এমনকি টিভিতেও শুনলাম প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। তখন মালিক সমিতির জহির ভাই আমাদের বললো, তোমাদের সবার জন্য অনুদান এসেছে। যার যত ক্ষতি হয়েছে বা যতটা দোকান ছিল সেই হিসাব করে অনুদানের টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু পরে এর কানাকড়িও পাইনি।


বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের রাবেয়া গার্মেন্টসের মালিক মো. মানিক খাঁন, তিশা গার্মেন্টসের মালিক মো. আনোয়ার হোসেন, মায়ের দোয়া গার্মেন্টসের শিমুল, বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের খোরশেদসহ কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলে জানা যায়। তারা কেউই কোনও আর্থিক সহযোগিতা বা অনুদান পাননি। সবাই এখন ঋণে জর্জরিত। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত তারা।


তিশা গার্মেন্টসের মালিক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসার সুবাদে কমবেশি সবার সঙ্গে বাকিতে লেনদেন হতো। আগুনে পুড়ে যখন সর্বনাশ হলো, তখন টুকটাক অনেকের পাওনা ঋণ করে পরিশোধ করেছি। এখনও প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ওপরে ঋণ আছে। রাতে ঋণের চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, কী করে এই ঋণ পরিশোধ করবো! শুধু আমি না, আমার মতো যারা বঙ্গবাজারে ব্যবসা করেছি, এক আগুনে পথের ফকির হয়ে গেছি। আগে দৈনিক ভিক্ষুকদের দুই-তিনশ' টাকা ভিক্ষা দিতাম, ৪ জন কর্মচারীর বেতন দিতাম, এখন আমি নিজেই ভিক্ষা করার পথে।


এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, আমাদের সর্বনাশ দেখে অনেক বড় বড় সেলিব্রিটি আর্থিক সহায়তার জন্য মালিক সমিতির ফান্ডে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সেখান থেকে এক পয়সাও পাইনি। আমার কথা হলো, সেই টাকা গেলো কোথায়! কেন আমার দেওয়া হয়নি! এই জবাব আমরা কার কাছে চাইবো। অল্প কিছু সহযোগিতা পেলেও তো অন্তত পরিবার নিয়ে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারতাম।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করছিলেন। আবার কেউ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুনে সব হারিয়ে এখন তারা অনেকটাই ঋণে জর্জরিত। কেউই এখনও আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ঋণের বোঝা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।


ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী এন এম সিল্ক হাউজের মালিক মো. নুরুন্নবী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমার তিন দোকানে চার কোটি টাকার বেশি মালামাল ছিল। এর মধ্যে ৯০ লাখ টাকা ব্যাংকের ঋণ এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার নেওয়া। আমি এখন ঋণে জর্জরিত। ঋণের বোঝায় জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না কী করে ঋণ শোধ করবো। ছেলেমেয়ে না থাকলে একদিকে চলে যেতাম, নয়তো মরে যেতাম। এখন তাও করার সুযোগ নাই।


আর্থিক কোনও সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী বলেন, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ যারা দায়িত্বে ছিলেন তখন তারা সান্ত্বনা দিয়েছিলেন— আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেওয়া হবে। শুনেছি সে সময় টাকাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পরিবর্তনের পর তারা সবাই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের একবার কপাল পুড়েছে আগুনে, তার ওপর যেই অনুদান পাওয়ার কথা ছিল সেটাও কপালে জুটলো না।


অনুদানের টাকা কেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্ন লিখে মেসেজ এবং কল করার পরেও তার কোনও জবাব মেলেনি বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে। বঙ্গবাজার দোকান মালিকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে সরকারের পটপরিবর্তনের পর থেকে বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কাউকে আর দেখা যায়নি। কারণ তারা বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ছিল।


এর আগে, অনুদানের বিষয়ে বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক ৯ কোটি টাকা দিয়েছেন কর্মচারীদের জন্য, দোকান মালিকের জন্য ছিল না। তা কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ১৫ কোটি টাকা সমন্বয় করে বণ্টন করা হবে। এছাড়া সমিতির ফান্ডে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা আছে। মোট ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ২৯৬১ জন ব্যবসায়ীর মাঝে বণ্টন করে দেবো।


বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির তৎকালীন একজন সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদান সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়ে গেছে। সেই টাকার কোনও হদিস নেই। তবে ফান্ডে যে টাকা আছে তা কেউ নিতে পারে নাই। ফান্ডে বর্তমানে ৭ কোটি টাকার বেশি আছে। সেটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে বণ্টন করলে তারা একটু স্বস্তি পাবেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২.৩৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২.৩৩ পূর্বাহ্ন