টাঙ্গাইলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুস না দেওয়ায় ৪৯ লাখ টাকার কার্যাদেশ বাতিলের অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিরুদ্ধে।অভিযোগ রয়েছে— ঘুস না দেওয়ায় পিপিআরের শর্তাবলি অনুযায়ী পাওয়া ৪৯ লাখ টাকার কাজ বাতিল করে দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান।
এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ঠিকাদার।
তবে সড়ক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাহী প্রকৌশলী ক্ষমতার বলে কাজ বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করতে পারেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এলেঙ্গা-ভুঞাপুর-চানগাবসারা ৫০০ মিটার প্যালাসাইডিংয়ের (এলটিএম) পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে। যার দরপত্র আইডি নং ৯৭৪৪৪৫। কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬০৫ টাকা।
পিপিআরের সব শর্ত অনুযায়ী, গত ১৬ মে মেসার্স এসএফ এন্টারপ্রাইজ দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। পরে যাচাই-বাছাই করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ৮১ জন দরদাতার মধ্যে লটারি করা হয়।
লটারিতে মেসার্স এসএফ এন্টারপ্রাইজ বিজয়ী হওয়ায় তাকে মৌখিকভাবে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। গত ৫ জুন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাত হোসেন টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী ওই ঠিকাদারকে উপসহকারী প্রকৌশলী (সওজ) দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই ঠিকাদারকে হোয়াটসঅ্যাপে কাজের ড্রইং (ডিজাইন) পাঠানো হয়। সেই ডিজাইন পেয়ে ঠিকাদার রড, সিমেন্ট এবং পাথর সংগ্রহ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও প্রাপ্ত কাজের নোটিশ অফ অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) না পাওয়ায় ঠিকাদার পুনরায় উপসহকারী প্রকৌশলী (সওজ) দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এ সময় দিদারুল আলম ওই ঠিকাদরকে জানান, নোটিশ অফ অ্যাওয়ার্ড পেতে হলে জামালপুর সার্কেলের জন্য ৩ শতাংশ এবং টাঙ্গাইল অফিসে ৪ শতাংশ পিসি মানি (ঘুস) দিয়ে সিএস অনুমোদনপূর্বক কার্যাদেশ নিতে হবে। এতে ওই ঠিকাদার পিসি মানি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ঠিকাদার জানতে পারেন তার কাজটি বাতিল করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, এ কাজের সহকারী প্রকৌশলী এনামুল এবং এস্টিমেটর উপসহকারী প্রকৌশলী খায়রুল ইসলামের নেতৃত্বে পিসি মানি (ঘুস) ঠিকাদারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। আর এতে সহযোগিতা করেন আরেক উপসহকারী প্রকৌশলী দিদারুল আলম। আর কোনো ঠিকাদার এই ঘুসের টাকা না দিলে কাজের সময় এবং কাজ শেষে বিল তুলতে চরম বিপাকে পড়তে হয়।
টাঙ্গাইল উপসহকারী প্রকৌশলী (সওজ) দিদারুল আলম জানান, এই কাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর পিসি মানির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এটা নিয়ে কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ এস্টিমেটর খায়রুল বাশারের।
উপসহকারী প্রকৌশলী খায়রুল ইসলাম জানান, যে কাজটি বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না।
সহকারী প্রকৌশলী এনামুল কে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান বলেন, নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষ টেন্ডার বাতিলের ক্ষমতা রাখে। জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে না বলে বাতিল করা হয়েছে। পরে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হবে।