রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে সবজি চাষে বিপ্লব হলেও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। কৃষকদের থেকে তিন-চার হাত ঘুরে সবজির দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে শসা ৮-১০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও ভোক্তা পর্যায়ে ওই শসার দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়।
বর্তমানে মহাসড়কে সড়কের দুই পাশে শ্রমিকদের দেখা যায় শসা, জিঙ্গা, পটোলসহ বিভিন্ন সবজি বস্তায় ভরছেন। বস্তাবন্দি হওয়ার পর ওই সবজি রংপুর নগরীর সিটি বাজার, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এসব সবজি পরিবহনের জন্য রাস্তার পাশে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরাগীগঞ্জে এক শসা চাষির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পাইকারি প্রতি কেজি শসা ৮ থেকে ১০ টাকায় তারা বিক্রি করছেন।
পাইকাররা এখান থেকে শসা, পটোল, জিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি কিনে নিয়ে যান।
কৃষকরা জানান, তারা কেজিতে এক থেকে দুই টাকা লাভে বিক্রি করেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজিতে পাঁচ-সাত টাকা মুনাফা করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা ১০ টাকার সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন।
ফলে সবজির দাম কমলেও এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ভোক্তারা। সেই সঙ্গে কৃষকরাও ন্যায় মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সব মিলিয়ে দেখা গেছে, কৃষক পর্যায় থেকে একটি সবজি তিন-চার হাত ঘুরে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে এক লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন শসা, জিঙ্গা, পটোল,করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁই শাক, মুলা, টমেটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাক-সবজি কৃষকদের ঘরে ওঠে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ২০ মেট্রিক টন।
কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি শাক-সবজির ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অনুকূল পরিবেশ থাকায় এই অঞ্চলের বৃহৎ, ক্ষুদ্র, বর্গা ও প্রান্তিক চাষিরা খরিপ-১, খরিপ-২ এবং রবি মৌসুমে শাক-সবজির আবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার কৃষক গৌরাঙ্গ রায়, পীরগাছার কল্যাণী ইউনিয়নের চাষি নজরুল ইসলাম বুলবুল, কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের আফজাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, বাজারে সবজি দাম চড়া থাকলেও তারা প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না। পাইকাররা কম দামে তাদের কাছ থেকে সবজি নিয়ে তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন।