ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ‘লুণ্ঠনমূলক’ ব্যয় কমাতে হবে

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ


আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1875201 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1875201 জন
বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ‘লুণ্ঠনমূলক’ ব্যয় কমাতে হবে
ছবি : সংগৃহীত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের চাপ ছিল সরকারের ওপর। সরকার আরও আগেই সংস্থাটির কাছে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় ও ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে আইএমএফ।


সেসময় সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য একটি ফর্মুলাভিত্তিক দর সমন্বয় পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে।


গত ২৪ এপ্রিল আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির চাপ সামলাতে বছরে চারবার বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করবে সরকার। এভাবে আগামী তিন বছরে মোট ১২ দফায় বিদ্যুতের দাম উৎপাদন খরচের সমান বা কাছাকাছি পর্যায়ে নিয়ে আসবে সরকার।


এসব নিয়ে কথা বলেন দুই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম ও বুয়েটের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ম তামিম।


বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বিদ্যুৎখাতের ‘লুণ্ঠনমূলক’ ব্যয় কমানোর কথা বলেছেন অধ্যাপক এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত একেবারেই অবাস্তব। চুরি বাড়ছে, ঘাটতি বাড়ছে। প্রকৃত ব্যয় অপেক্ষা অনেক বেশি ব্যয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সেই ব্যয়কে আমরা ‘লুণ্ঠনমূলক’ ব্যয় বলছি। সেই ব্যয় প্রতিরোধ করাটা জরুরি। যদি অন্যায্য ব্যয় থেকে বিদ্যুৎখাতকে মুক্ত করা না যায় তাহলে একদিকে এ খাতে মূল্য বাড়বে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে ঘাটতি সমন্বয় করবে।


দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় কখনোই করতে পারবে না। এরকমভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে খরচ কমানোর চেষ্টা করবে। ব্যয় বাড়িয়ে যে কারণে লুণ্ঠন, চুরি, আত্মসাৎ হচ্ছে, এসব জায়গা রোধ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসার সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতা জড়িত।


‘লুণ্ঠনমূলক’ ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য সরকার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, বরং বিভিন্নভাবে ‘লুণ্ঠন’ প্রক্রিয়াকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে পণ্য বা সেবার দাম বাড়বে। ভোক্তাদের প্রকৃত আয় কমে যাবে। মুদ্রাস্ফীতি এমনিতে লাগামের বাইরে চলে যাচ্ছে। মানুষ ভোগব্যয় কমিয়ে দিলে সরকারের আয় কমে যাবে। বাজেট ঘাটতি দেখা দেবে।’


বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, একদিকে মূল্য বাড়িয়ে সরকার বলছে, বিদ্যুৎখাতের ঘাটতি কমাবে। কিন্তু সরকার বাজেট ঘাটতি কীভাবে কমাবে? নতুন টাকা ছাপিয়ে টাকা যে বাড়াবে এতে টাকার মূল্য আরও কমবে। সাধারণ মানুষ কষ্টে থাকবে, মাঝখান দিয়ে একটা শ্রেণির মানুষ লুণ্ঠন করবে, টাকা পাচার করবে।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, এটা ঠিক যে বিদ্যুৎখাতে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। গত বছর এটা অস্বাভাবিক হয়েছে কারণ জ্বালানির দাম অনেক বেশি ছিল। এবছর জ্বালানির দাম অনেক কমে এসেছে। ভর্তুকির পরিমাণও অনেক কমে আসবে। অপারেশনের মাধ্যমে উৎপাদনের খরচ যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে ভর্তুকির পরিমাণ আরও কমে আসবে। সরকারের চেষ্টা করা উচিত উৎপাদন খরচ কমানোর।


এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, দক্ষতা বাড়ানো হোক আর কম মূল্যের বিদ্যুৎ বেশি উৎপাদন করে কিংবা বেশি মূল্যের বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করে হোক, যদি উৎপাদন খরচ কমানো হয় তাহলে ভর্তুকির পরিমাণ কমে যাবে। দাম বাড়াতে হলে লিমিটেডভাবে করতে পারে। কিন্তু কিছু ভর্তুকি দিতেই হবে, কারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও কৃষিখাতে ভর্তুকি দিতে হবে। যাতে বিদ্যুৎ তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তখন দেখা যাবে বিদ্যুতের ব্যবহার কমে গেছে।


তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হলে বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) শুনানির মাধ্যমে বাড়াতে হবে, এটি না করে এককভাবে যদি বাড়ায় তাহলে সেটির জবাবদিহিতা থাকে না।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ



আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ