ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ওপর নজর ডিবির

কারিগরি বোর্ডের সনদ বাণিজ্য
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ


আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1885648 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1885648 জন
সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ওপর নজর ডিবির
ছবি : সংগৃহীত

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চক্রটি বহু আগ থেকেই সনদ জালিয়াতি করে আসছিল। বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি যুগান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল-‘দুর্নীতির ভারে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড : পরীক্ষা না দিয়েই পাস’। প্রতিবেদনে বলা হয়, পলিটেকনিকের ফেল করা শত শত শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে পাস করানো হয়। নিয়ম ভেঙে মাঝপথে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষার্থী রিপ্লেস করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরাসরি এসএসসি পাস করানোর রমরমা ব্যবসা চলছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে। কিন্তু তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা কারিগরি বোর্ড কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ২০২০ সালের পর থেকে গত সোয়া চার বছরে এ চক্রের সদস্যরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পাঁচ-ছয় হাজারের বেশি জাল সনদ তারা বিভিন্নভাবে তৈরি করে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। চক্রটি এমন কৌশলে সনদ তৈরি করত এবং বোর্ডের ওয়েবসাইটে সেই রেজাল্ট দিয়ে রাখত, যা অবিশ্বাস বা সন্দেহ করার মতো ছিল না। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে চারদিকে হইচই পড়ে যায়। ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকা থেকে বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানকে সহকারী ফয়সালসহ গ্রেফতার করে ডিবি। এর পরই ব্যাপক আলোচনায় আসে সনদ জালিয়াতির বিষয়টি। চক্রের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আল আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনসহ কয়েকজনকে। গ্রেফতার ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আলী আকবার খানকে।


এদিকে সার্টিফিকেট জালিয়াতির সঙ্গে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের কেউ জড়িত কি না, খতিয়ে দেখছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস গাজীপুরের শিমুলতলীতে অবস্থিত। যেখানে দেশের টাকা ছাপানোর একমাত্র কারখানা।


জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। যাদের নাম এসেছে, তাদের সবাইকে একে এক আইনের আওতায় আনা হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরও অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, সার্টিফিকেটগুলো কোথায় বানানো হতো? কারা বানাত-সব বিষয় নিয়েই আমাদের তদন্ত চলছে।


ডিবি দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সদস্যরা জালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ থেকে ছয় হাজার সার্টিফিকেট তৈরি করে। অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধনের তথ্য সংযোজন করত চক্রের সদস্যরা। ওয়েবসাইটে সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সনদগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করত তারা। এ কারণে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনো দেশে বসে বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুগলে সার্চ করলে তা সঠিক পাওয়া যায়।


জালিয়াতির অভিযোগ অনেক পুরোনো হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জড়িতদের বিরুদ্ধে। ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিষয়টি নিয়ে এতদিন দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) যারাই তদন্ত করেছেন, তারা মাঝপথে থেমে গেছেন। এ কারণে চক্রের সদস্যরা মনে করেন তারা আইনের ঊর্ধ্বে। আর এ ধারণা থেকেই তারা হয়ে উঠেন অধিকতর বেপরোয়া। অবশেষ ডিবির জালে ধরা খেয়েছেন চক্রের সদস্যরা।


ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বোর্ডের সনদ/মার্কশিট ছাপানো হয় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে। সার্টিফিকেট/মার্কশিট ছাপানোর পর সেগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। শামসুজ্জামান সনদগুলো ওয়েবসাইটে আপলোডের দায়িত্বে ছিলেন। প্রশ্ন হলো-শামসুজ্জামান এ সনদগুলো কোথা থেকে পান? এগুলো কি সত্যি সত্যিই সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হতো? আর ওই প্রেস থেকে ছাপানো হলে নিশ্চয়ই সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ আছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এছাড়া জালিয়াতচক্রের সদস্যরা সনদ-মার্কশিটগুলো সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের বিকল্প অন্য কোনো স্থান থেকে ছাপিয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির ডিসি বলেন, সনদ তৈরির মূল দায়িত্ব হলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের। তাকে সহযোগিতা করার কথা ডেপুটি কন্ট্রোলারের। তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। এছাড়া অবৈধভাবে সনদ কেনাবেচা, সেগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করাসহ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোর দায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না। এ কারণে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেফায়েত উল্লাহকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আলী আকবর খান ও কেফায়েত উল্লাহ মঙ্গলবার ডিবিতে কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছিলেন। মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা ওইসব কাগজপত্র ডিবিকে সরবরাহ না করেই চলে যান। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইব। বোর্ডের অনেক ফাইল চাইব। সনদগুলো কীভাবে তৈরি করা হয়েছে, ব্যাখ্যা চাইব। সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ



আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন