ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

রাস্তার পাশে রক্তাক্তদেহ মিলল কিলার মামুন সম্রাটের: অন্ধকার জগতের শেষ অধ্যায়

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

মোঃ সাকিব হোসেইন | সংবাদদাতা
তিতাস (কুমিল্লা)
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ৩.৩২ অপরাহ্ন

আপডেট : শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ৩.৩২ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 378346 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 378346 জন
রাস্তার পাশে রক্তাক্তদেহ মিলল কিলার মামুন সম্রাটের: অন্ধকার জগতের শেষ অধ্যায়
ছবি- মামুন সম্রাট (২৮)।

এক সময়ের ত্রাস, ভাড়াটে খুনি ও মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত কিশোর গ্যাং লিডার মামুন সম্রাট (২৮) শেষ পর্যন্ত নিজেই হলেন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার। ২৩টি মামলার আসামি এই কুখ্যাত অপরাধীকে গ্রেফতার নয়, বরং রক্তাক্তভাবে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেল — তার অপরাধজগতের অবসান হলো নির্মম এক কুপিয়ে হত্যার মাধ্যমে।


তবে প্রশ্ন থেকে যায়— এত অপরাধের পরও কীভাবে এতদিন অধরা ছিলেন মামুন সম্রাট? কখনো নাম পাল্টে, কখনো ঠিকানা বদলে, আবার কখনো ক্ষমতাবানদের ছত্রছায়ায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি। এই প্রতিবেদনে থাকছে মামুন সম্রাটের অপরাধজগত, তার শেষ যাত্রা এবং পুলিশ কীভাবে তার গতিবিধি ট্র্যাক করছিল।


মামুন সম্রাট, আসল নাম মামুন হোসেন। বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার শোলাকান্দি গ্রামে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি গা ঢাকা দিয়ে বসবাস করছিলেন দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের ভুলিরপাড় গ্রামের একটি ভাড়া বাসায়। এলাকাবাসী তাকে চিনতেন কিশোর গ্যাং নেতা, মাদক বিক্রেতা এবং ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজ হিসেবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, মামুনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র আইনে মোট ২৩টি মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। গোপনে তিনি নানা অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে ভাড়াটে খুনিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।


পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মামুন সম্রাট দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তার গতিবিধির তথ্য পায় একাধিক অপরাধচক্র।


গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাতে মামুন সম্রাট ঢাকার একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে তিনজন নারীসহ কক্সবাজারগামী একটি বাসে ওঠেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গৌরীপুর মোড়ে বাস থামলে পানি কিনতে বাস থেকে নামেন তিনি। এটাই ছিল তার জীবনের শেষ ভুল।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা মামুন সম্রাটকে বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ঘিরে ফেলে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা ও গলায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। মুহূর্তেই রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন মামুন। হামলাকারীরা নিশ্চিত হয় যে তিনি মারা গেছেন, তারপর পালিয়ে যায়।

গৌরীপুর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মামুনের হাত থেকে বহু মানুষ চাঁদাবাজি ও হুমকির শিকার হয়েছেন। তার মৃত্যুতে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছে না, তবে ভেতরে অনেকেই স্বস্তি অনুভব করছেন।


যদিও মামুন সম্রাট গ্রেফতার হয়ে আইনের আওতায় আসেননি, কিন্তু অপরাধের চরম পরিণতি থেকে শেষ রক্ষা হয়নি তার। দুর্বৃত্তের হাতে কুপিয়ে নিহত হওয়া— এটি যেন তার নিজেরই বপন করা বীজের ফল। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ এই হত্যার রহস্য কত দ্রুত উদ্ঘাটন করতে পারে এবং এর পেছনে কারা জড়িত, তা আইনের মুখোমুখি আসে কি না।


দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুনায়েত চৌধুরী বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মামুন সম্রাটের নামে বহু মামলা ছিল এবং তিনি এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদকের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। এমন ব্যক্তির অনেক শত্রু থাকে— আমরা সকল দিক বিবেচনায় তদন্ত করছি।”


তিনি আরও বলেন, “তার মাথা ও গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। সম্ভবত প্রতিশোধের বশেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে কাজ চলছে।”


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

মোঃ সাকিব হোসেইন | সংবাদদাতা
তিতাস (কুমিল্লা)
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ৩.৩২ অপরাহ্ন
আপডেট : শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ৩.৩২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ