ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

১৮০ জনের স্থলে মাত্র ৬৭ জন

নার্স সংকটে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা, ঝুঁকিতে রোগীরা

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০.৩৭ অপরাহ্ন

আপডেট : মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০.৩৭ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 470610 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 470610 জন
নার্স সংকটে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা, ঝুঁকিতে রোগীরা
ছবি : সংবাদদাতা প্রেরিত।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা বাড়লেও বাড়েনি নার্সের সংখ্যা। আইসিইউ চালনার মূল চালিকাশক্তি নার্স ও সহায়ক কর্মীর সংকট না কাটায় জনবল ঘাটতির কারণে কাঙ্খিত সেবার মান নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু নার্স বাড়ানো জরুরি। কারণ আইসিইউতে রোগীর অবস্থা মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতে বাড়তি জনবল দরকার। এই হাসপাতালে সম্প্রতি চালু হয়েছে নতুন ৩০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড। ফলে মোট শয্যা দাঁড়াল ৬০। তবে আইসিইউ চালনার মূল চালিকাশক্তি নার্স ও সহায়ক কর্মীর সংকট রয়েছে। 


তথ্য অনুযায়ী, চমেক হাসপাতালের ৬০ আইসিইউ শয্যার জন্য কর্মরত আছেন ৬৭ জন নার্স, ৩২ জন মেডিকেল অফিসার ও ১০ জন কনসালটেন্ট। তবে বেশিরভাগ কনসালটেন্ট অস্ত্রোপচার কক্ষে কাজ করেন, আইসিইউতে সরাসরি নিয়োজিত নন।আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করা এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন নার্সের ওপর একাধিক সংকটাপন্ন রোগীর দায়িত্ব থাকলে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন। শয্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনবল না বাড়ালে কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কঠিন হবে।


 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার সোসাইটির গাইডলাইন অনুসারে, প্রতি আইসিইউ শয্যার জন্য দিনে ১ জন নার্স থাকা উচিত। অর্থাৎ চমেকে আইসিইউ’র ৬০ শয্যার জন্য ২৪ ঘণ্টায় ১৮০ জন নার্স প্রয়োজন। অথচ চমেকে বর্তমানে আছেন মাত্র ৬৭ জন। তাছাড়া, প্রতি ৪-৫ শয্যার জন্য ১ জন মেডিকেল অফিসার এবং প্রতি ৮-১০ শয্যার জন্য ১ জন কনসালটেন্ট থাকা গাইডলাইনে বলা হলেও, চমেকের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। তবে তাদের অনেকেই এনেস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত থাকায় আইসিইউতে সরাসরি দায়িত্ব পালন করেন না। ফলে জনবল ঘাটতির চাপ থেকেই যাচ্ছে।


বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ২,২০০ শয্যার মধ্যে আইসিইউ শয্যা ৬০। যেখানে রোগীর চাপ প্রতিদিন বাড়ছে। শয্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছুটা চাপ সামলানো সম্ভব হলেও প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো না থাকলে কাঙ্খিত সেবা মান বজায় রাখা কঠিন হবে, বলছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।


জানা গেছে, সম্প্রতি চমেক হাসপাতালের চতুর্থ তলায় (ইউনিট-১) নতুন অবকাঠামো তৈরি করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ৩০ শয্যার আইসিইউ চালু হয়েছে। আগে এই ইউনিটে ১৮ শয্যা ছিল। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের নিচতলায় (ইউনিট-২) ৩০ শয্যার আরেকটি ইউনিট চালু হয়। ফলে চতুর্থ তলার পুরনো ১৮ শয্যা এখন ৩০-এ উন্নীত হয়েছে।


চমেক সূত্র জানায়, নার্সদের তিন শিফটে কাজ করার কথা থাকলেও ছুটি ও অসুস্থতার কারণে প্রতিটি শিফটে নার্সের সংখ্যা কম থাকে। ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনার আছেন মাত্র ১৪ জন, যাদের তিন শিফটে ভাগ হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রোগী পরিবহনসহ সহায়ক কাজে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।


জানা গেছে, ১৯৬০ সালে মাত্র ১২০ শয্যা নিয়ে চমেক হাসপাতালের যাত্রা। তখন আইসিইউ ছিল মাত্র ৫টি। ২০০৫ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় ১২। এরপর ২০১৩ সালে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা বেড়ে ১,৩১৩ হলেও আইসিইউ শয্যা বাড়েনি। ২০২০ সালের অক্টোবরে ১৫ বছর পর তা ২০তে উন্নীত হয়। এরপর ২০২৪ সালে একসঙ্গে ৩০টি বেড়ে ৫০ শয্যা হয়। অবশেষে এক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে ৬০টি আইসিইউ শয্যা চালু হয়েছে।


 এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, শয্যা বাড়ানো হয়েছে, এতে রোগীরা সুযোগ পাচ্ছেন। তবে নার্স বাড়ানো জরুরি। কারণ আইসিইউতে রোগীর অবস্থা মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতে বাড়তি জনবল দরকার। 


হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, আমরা জনবল বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই ঘাটতি পূরণ হবে। পুরো হাসপাতালে নার্সসহ বিভিন্ন জনবলের সংকট রয়েছে। এ নিয়ে বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০.৩৭ অপরাহ্ন
আপডেট : মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০.৩৭ অপরাহ্ন