ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া- নজরদারিতে আন্তর্জাতিক মহল

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে ট্রাম্পের উদ্যোগ কতটা কার্যকর?

সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা, কিন্তু রক্তক্ষয় থামছে না!
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রতিবেদক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ৩.১৬ অপরাহ্ন

আপডেট : বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ৩.২১ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 512296 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 512296 জন
ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে ট্রাম্পের উদ্যোগ কতটা কার্যকর?
গ্রাফিক: দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ।


মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই, যদিও কাগজে-কলমে ‘সংঘর্ষবিরতি’ কার্যকর হয়েছে বলেই দাবি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ইরান ও ইজরায়েল উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তির বার্তা এলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণা ও তৎপরতা সত্ত্বেও অঞ্চলজুড়ে এখনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এই সংঘর্ষবিরতি কতটা বাস্তব, আর কতটা রাজনৈতিক প্রচার?


ট্রাম্পের ঘোষণা: বাস্তব না কৌশল?


সোমবার রাত (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী) সোশ্যাল মিডিয়ায় হঠাৎ করেই ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান ও ইজরায়েল সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তাঁর কথায়, “পরবর্তী ছ’ঘণ্টার মধ্যেই সংঘর্ষবিরতি কার্যকর হবে। প্রথমে ইরান থামবে, তার ১২ ঘণ্টা পর ইজ়রায়েল। ২৪ ঘণ্টা পরে যুদ্ধ শেষ ঘোষণা করা হবে।” তিনি দুই দেশের ‘সাহস’ ও ‘বুদ্ধিমত্তা’র প্রশংসাও করেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটল ঠিক উল্টো। সংঘর্ষের আগুন কমার বদলে তা যেন আরও জ্বলে উঠল।


তেহরানের দ্ব্যর্থহীন বার্তা, তেল আভিভের প্রতিক্রিয়া


ইরান শুরুতেই ট্রাম্পের দাবি উড়িয়ে দেয়। ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্পষ্ট করেন, আমেরিকার সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি। তাঁর কথায়, “আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি। ইজ়রায়েলই প্রথম হামলা চালিয়েছিল। তাই ওদেরই আগে থামতে হবে।” যদিও পরবর্তীতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েসকিয়ান জানান, রক্তপাত এড়াতে তাঁরা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত।


ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া প্রথমে সহনীয় হলেও পরে তা বদলায়। নতুন করে ইরানের ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাট্‌ৎজ়। এর জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ফলে শান্তির বদলে শুরু হয় আর এক দফা রক্তক্ষয়ী সংঘাত।


ক্ষয়ক্ষতির চিত্র


ইজরায়েলি হামলায় ইরানে প্রাণ হারান অন্তত ৯ জন। অন্য দিকে, ইরানের পাল্টা হামলায় ইজরায়েলের বেরশেভা শহরে তিন জন নিহত হন। ক্ষয়ক্ষতির এই চিত্র প্রমাণ করে—সংঘর্ষবিরতি কার্যকর হলেও তা ছিল কাগজে কলমেই।


কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা, ট্রাম্পের ক্ষোভ


মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ট্রাম্পের অবস্থান আরও জটিল হয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে তিনি ইজরায়েলের উদ্দেশে লেখেন, “তুমি যদি এই বোমাগুলি ছোড়ো, তবে এটা বড় লঙ্ঘন হবে। এখনই তোমার পাইলটদের ফিরিয়ে নাও।” তাঁর এই মন্তব্যেও যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে।


রাশিয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়া, পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব


রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, অনেকেই ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে। সঙ্গে আমেরিকার নেতৃত্বে ইরানে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর নিন্দাও করে ক্রেমলিন। তাদের দাবি, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে।


রবিবার ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। যদিও পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী। তিনি চান ইরান শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাক এবং ইজরায়েলের নিরাপত্তাও বজায় থাক।


রাজনৈতিক বার্তা ও পালাবদলের বিতর্ক


ট্রাম্পের এক পোস্টে ইরানে শাসকবদলের ইঙ্গিতও ছিল। যদিও পরে তিনি তা থেকে সরে এসে বলেন, “আমি এটা চাই না। শাসক পরিবর্তনের সময় বিশৃঙ্খলা হয়।” তিনি আরও জানান, “ইরানিদের ভাল থাকা উচিত। ওদের প্রচুর সম্পদ রয়েছে, কিন্তু পরমাণুশক্তি নয়।”


পুতিন-ট্রাম্প ফোনালাপ ও ইউক্রেন প্রসঙ্গ


ট্রাম্প দাবি করেন, পুতিন তাঁকে ইরান ইস্যুতে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। বরং পুতিনকে বলেন, “আপনার বিষয়েই আমাকে সাহায্য করতে হবে!” এই প্রসঙ্গেই ট্রাম্প ফের ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চুক্তির ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যদিও সে বিষয়ে কোনও স্পষ্টতা দেননি।


যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হলেও বাস্তবতায় সেই বার্তার প্রতিফলন এখনও অনুপস্থিত। ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব এখনও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ট্রাম্পের প্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ—এটা রাজনৈতিক প্রচার না সত্যিকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ? রাশিয়ার আগ্রহ, আমেরিকার অবস্থান এবং তৃতীয় শক্তির প্রভাব—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।


পশ্চিম এশিয়ার চলমান উত্তেজনা নজরদারিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। যেকোনও ভুল সিদ্ধান্ত বা উসকানিমূলক পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দিতে পারে। বিশ্ববাসী আপাতত তাকিয়ে—এই যুদ্ধবিরতি আদৌ বাস্তব হবে কি না।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | সারা বিশ্ব
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রতিবেদক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ৩.১৬ অপরাহ্ন
আপডেট : বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ৩.২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ