কাঠমান্ডু, নেপাল - নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার মুখে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ক্রমশ সহিংস রূপ নেয়, যার ফলস্বরূপ প্রাণহানি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
জেন-জি বিক্ষোভকারীদের তুমুল আন্দোলন:
মূলত নেপালের জেন-জি (Generation-Z) তরুণরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি এবং তাদের সন্তানদের বিদেশে রাজকীয় জীবনযাপনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে। সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করলে এই ক্ষোভ আরও তীব্র হয় এবং বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত এবং ৪০০ জনেরও বেশি আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কারফিউ জারি করলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং সহিংসতা বৃদ্ধি:
জনগণের চাপের মুখে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী ওলি তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সাংবিধানিক পথে সংকটের সমাধান করতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তার পদত্যাগের পরেও বিক্ষোভ থামেনি, বরং আরও সহিংস হয়ে উঠেছে।
বিক্ষুব্ধ জনতা ওলি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবাসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংসদ সচিবালয়ের মুখপাত্র একরাম গিরি এই হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর মৃত্যু:
এই সহিংসতার মধ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এনডিটিভি-সহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিক্ষুব্ধ জনতা কাঠমান্ডুর ডাল্লু এলাকার তার বাড়িতে আগুন দিলে তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
শান্তির আহ্বান:
পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঠমান্ডু মহানগরীর মেয়র বালেন্দ্র শাহ আন্দোলনকারীদের প্রতি শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যেহেতু পদত্যাগ করেছেন, তাই এখন আর প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংস করা উচিত নয়। সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ আমাদের সবার যৌথ সম্পদ।” তিনি তরুণদের সংযম দেখানোর অনুরোধ করে বলেন, এখন থেকে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই।
এই তীব্র বিক্ষোভ ও সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন চরম অস্থিতিশীল। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের দাবি পূরণের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।