ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্য

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিতর্ক

বৈষম্যের অভিযোগে ‘ওয়াকআউট’ সিপিবি ও গণফোরাম নেতাদের ও ‘দিনটি হতাশার, জানাল এনসিপি
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১১.০৪ অপরাহ্ন

আপডেট : বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১১.০৫ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 524572 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 524572 জন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিতর্ক
- রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় দিনের সংলাপ।


রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় দিনের সংলাপ বুধবার (১৮ জুন) রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত, উত্তেজনা ও সাময়িক ‘ওয়াকআউট’-এর কারণে আলোচনার ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এই সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, সিপিবি, গণফোরাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ কয়েকটি দল।


বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে জামায়াতের ‘অতিরিক্ত’ সুযোগ

সংলাপের মধ্যে মূল বিতর্কের জন্ম হয় জামায়াতে ইসলামীর তিনজন প্রতিনিধিকে একাধিকবার বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়াকে ঘিরে। এর প্রতিবাদে সংলাপ ত্যাগ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও গণফোরামের নেতারা। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, সংলাপে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে।


রুহিন প্রিন্স বলেন, “জামায়াতের তিনজন কথা বলেছেন, অথচ আমাদের একজন বক্তব্য দিতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়েছে।” যদিও এই আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বিষয়টি ‘নোট’ করেছে বলে জানিয়ে দল দুটি সংলাপে ফের যোগ দেয়।


জামায়াতের অবস্থান ও বিএনপির সংবিধান সংশোধনী প্রসঙ্গ

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের সামনে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন বৈঠককে ঘিরে। যৌথ বিবৃতিতে নিজেদের উপেক্ষিত ভাবার কারণেই সংলাপের পূর্বদিন জামায়াত আলোচনায় অংশ নেয়নি। তবে আজ তাদের অংশগ্রহণ ছিল দৃশ্যত সক্রিয়।


অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা এমন কোনও সংবিধানিক কাঠামো চাই না যেখানে একটি কর্তৃপক্ষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও জবাবদিহিতার বাইরে থাকবে।” তিনি সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিরোধিতা করেন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বর্তমান পদ্ধতি রাখার পক্ষে মত দেন।


সংলাপ কি রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন?

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাৎ হোসেন সেলিম পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও আলোচনার ভেতরের সংকট ছিল স্পষ্ট। “আপনারা তো ১০ জন মানুষেরও প্রতিনিধিত্ব করেন না” — জামায়াতের নেতার এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা যখন কথা বলেছি তখন আমাদের থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।”


জাতীয় নাগরিক পার্টির হতাশা ও বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিত

একটি ব্যতিক্রমী অবস্থান নেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “আজকের দিনটি হতাশার। যারা এক সময় আইন ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারের দাবি তুলেছিল, তারা আজ বিরোধিতা করছে।” তাঁর ভাষ্য, “শুধু সমালোচনা নয়, বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া উচিত।”


ঐকমত্যের সংলাপে অসন্তোষের বিস্তার

এই সংলাপ জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হলেও আজকের পরিস্থিতি বলে দেয়, নীতিগত মতপার্থক্য, ইতিহাসের উত্তরাধিকার ও নেতৃত্বের বৈষম্য রাজনৈতিক সংলাপকে একীভূত করতে এখনও বড় বাধা। জামায়াতের মত একটি বিতর্কিত দলের প্রতি অতি গুরুত্ব প্রদান অন্যদের মধ্যে বৈষম্যের অনুভূতি তৈরি করেছে, যা সরাসরি সংলাপের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।


একইসাথে, বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থানের মধ্যে সুপ্ত দূরত্ব এবং এনসিপির মতো নতুন রাজনৈতিক ধারার হতাশা ভবিষ্যতে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।


জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা, নির্বাচন পদ্ধতি ও রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে গ্রহণযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা। তবে আজকের আলোচনায় পক্ষপাতিত্ব, বৈষম্য, অতীত দ্বন্দ্ব ও বর্তমান মতপার্থক্য এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে "ঐকমত্য" শব্দটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। কমিশনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ — কীভাবে সবাইকে যুক্ত রেখে কার্যকর আলোচনার মঞ্চ তৈরি করা যায়।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১১.০৪ অপরাহ্ন
আপডেট : বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১১.০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ