ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

ছেলের শ্বাশুড়ীর মামলার ভয়ে মায়ের আত্মহত্যা, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে দালাল চক্রের অপচেষ্টা

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

মো. সাকিব হোসেইন | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
কুমিল্লা
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ৯.৫৪ অপরাহ্ন

আপডেট : রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ৯.৫৪ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 747235 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 747235 জন
ছেলের শ্বাশুড়ীর মামলার ভয়ে মায়ের আত্মহত্যা, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে দালাল চক্রের অপচেষ্টা
ছবি : সংবাদদাতা প্রেরিত।

কুমিল্লার তিতাসে ছেলের শ্বাশুড়ীর দায়ের করা মামলার ভয়ে মায়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ এনে ৪জনের নামে মামলা হলেও প্রকৃত জড়িতরা মামলা থেকে বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর শুরু থেকেই একটা দালালচক্র এমনসব অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে এই অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।


গেলো ১লা মে উপজেলার কড়িকান্দি ইউনিয়নের বন্দরামপুর গ্রামের নয়াপাড়া মুন্সি বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে।


নিহত পারভীন বেগম (৪৭) ওই এলাকার ভাড়াটিয়া ও মুরাদনগরের পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের মৃত মোস্তাক মিয়ার স্ত্রী।


সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ৫মাস পুর্বে হোমনার ভাষানিয়া ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের প্রবাসী কাবিলের মেয়ে আখি আক্তার(২০) এর সাথে বিয়ে হয় মুরাদনগরের পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের মৃত মোস্তাক এর ছেলে ফয়সালের সাথে।


তবে দীর্ঘদিন ধরে তিতাসের বন্দরামপুর গ্রামের মোল্লা বাড়ীর ফয়সালের নানা কামাল উদ্দিন কাজী মোল্লার আশ্রয়েই মুন্সি বাড়ীতে ভাড়া বাসায় থাকতো এবং এখানেই প্রতিবেশী মৃত জানে আলমের ছেলে প্রতিবন্ধী শাহ পরাণের মধ্যস্ততায় উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়ের এক মাসের মাথায় ফয়সালের বিরুদ্ধে পরকিয়ার অভিযোগ তুলে বাপের বাড়ীতে চলে যায় ফয়সালের স্ত্রী আখি আক্তার।


অপরদিকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পরপুরুষের সাথে পালিয়ে যাবার পাল্টা অভিযোগ তুলে একাধিকবার গ্রাম্য শালিসের আয়োজন করেন ফয়সালের পরিবার।


তবে গ্রাম্য শালিসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় একটা দালালচক্রের যোগসাঁজসে গত মার্চ মাসের ৬তারিখে তিতাস থানায় মামলা নং-৪ দায়ের করেন। ওই মামলায় ভিকটিম পারভীনসহ ৯জনকে অভিযুক্ত করে এবং অজ্ঞাত ২/৩জনকে আসামী করা হয়।


মামলার পর বিবাদীগণ বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন লাভ করে বাড়িতে এসে উপজেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক যুবদল নেতা তোফায়েল খানের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির শর্তে প্রথমে তাকে ২০হাজার ও পরে ৫০হাজার টাকা দেয়া হয়। এই টাকা দেয়ার পরও আরো টাকা লাগবে বলে পারভীন বেগমকে মানসিকভাবে চাপ দেয়া হয় বলে ওই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার।


তবে এই টাকা সম্পর্কে তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদ উল্যাহ কিছুই জানেন না বলে জানান এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আই.ও) ট্রেনিং এ থাকায় ও ভিকটিম মহিলা হওয়ায় তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পারভীন বেগম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রয়েছে এবং বিবাদীরা সবাই জামিনে রয়েছে বলে তিনি জানান।


বিবাদীদের মধ্যে বয়সের সমস্যা থাকায়, তিনি সন্দেহ থেকে নিজেই মামলাটি তদন্ত করে চার্জশীট গঠনের জন্য বিবাদীদের বাড়িতে গিয়েছেন বলেও জানান। তোফায়েল খান সম্পর্কে তিনি বলেন, তোফায়েলের সাথেও আমাদের কোন প্রকার, কোন কথা বার্তা হয় নাই, বরং সে (তোফায়েল) সকালে এসে আরো ঘটনা অন্য রকম বলে আমাদের শাসিয়ে যায়।


এদিকে পারভীন বেগমসহ একই পরিবারের ৯জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলার ভয় অন্যদিকে আরো টাকা দেয়ার জন্য যুবদল নেতার মানসিক চাপ, এসব সইতে না পেরে অবশেষে ক্ষোভে-দুঃখে বিষাক্ত কেড়ির ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন পারভীন বেগম (৪৭)।


মৃত্যুর পর নিহত পারভীন বেগমের লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়া ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে ফের মরিয়া হয়ে উঠে তিতাস উপজেলা যুবদল নেতা তোফায়েল খান।


স্থানীয় সাংবাদিকরা এমনসব ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তিনি প্রথমে বাধা প্রদান করে মেজাজ হারান এবং তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।


অন্যদিকে নিহত পারভীন বেগমকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য তিনি নিহতের স্বজনদের খোঁজেন এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন "তিনি থানার কাজ শেষ করে চলে এসেছেন"।


তবে সাংবাদিকদের সরব উপস্থিতির কারণে লাশের ময়না তদন্ত করা হয় এবং পারভীন বেগমের আত্মহত্যার ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে ৪জনকে বিবাদী করে হত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়।


এই মামলায় স্থানীয় প্রতিবন্ধী যুবক মোঃ শাহ পরান ও তার ভাই সজিবকে অভিযুক্ত করায় আবারো বিতর্কের সৃষ্টি হয়।


যুবদল নেতা তোফায়েল আহমেদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিলেও মামলায় কেনো তার নাম নেই এমন প্রশ্নের জবাবে নিহতের বোন ও মামলার বাদী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, গতকাল আমার মাথা ঠিক ছিলো না। আজকে যাদেরকে দোষি মনে করেছি; তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছি। বাকিটা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।


প্ররোচনা মামলার ১নং বিবাদী শাহ পরাণের স্ত্রী লিপি আক্তার বলেন, আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। সে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে বাজারে দোকানের পাশেই ভাড়া বাসা নিয়ে থাকে। প্রতিহিংসা ও শত্রুতা বসত আমার স্বামী ও দেবরকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। অথচ পুরো গ্রামবাসীর উপস্থিতেই যুবদল নেতা তোফয়েলের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকির অভিযোগ করেছিলো। এখন আপনারা তদন্ত করে সত্যটা তুলে ধরুন।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ্য করে উপজেলা যুবদলের সাবেক নেতা তোফায়েল খান বলেন, ওদেরকে জিজ্ঞেস করে নিউজ করো। আমাকে জিজ্ঞেস করে তো নিউজ করবা না।  বিএনপি'র নেতাদের ইঙ্গিত করে বলেন, "তারা বাচ্চাগরে উল্ডা বুঝাইয়া, একটা প্যাচগুছ লাগাইতে চাইছে। আমাদের এখানে বিএনপি'র পদপ্রার্থী দাঁড়াইছে দু-তিন জন কেন্ডিডেট। টাকা লেনদেনের প্রশ্নে তিনি বলেন,  এসব ডাহা মিথ্যা।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

মো. সাকিব হোসেইন | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
কুমিল্লা
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ৯.৫৪ অপরাহ্ন
আপডেট : রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ৯.৫৪ অপরাহ্ন