বরিশাল সদরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী রাজিয়া সুলতানা (ছদ্মনাম) তার গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে তার আনন্দের মুহূর্তগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। গর্ভে সন্তান কন্যা হলে পরিবারে শুরু হয় অবহেলা ও বঞ্চনা।
রাজিয়া জানান, যখন তার গর্ভে কন্যাসন্তান রয়েছে, তখন তার শাশুড়ি তাকে দেখতে আসেননি। সমাজে কন্যা সন্তানকে গ্রহণ না করার প্রবণতা প্রমাণ করে, পরিবার ছাড়াও রাষ্ট্র ও সমাজের দায় রয়েছে এই বৈষম্যের পেছনে।
বর্তমানে, বাংলাদেশের ৪৫ শতাংশ শিশু ১৮ বছরের নিচে এবং এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ কন্যাশিশু। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্যমতে, চলতি বছরে কন্যাশিশুরা যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, অপহরণ এবং আত্মহত্যার মতো নানান নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মাতৃগর্ভে লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ না করার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। চিকিৎসকরা জানান, আল্ট্রাসনোগ্রাম সাধারণত শিশুর জন্মগত ত্রুটি শনাক্তের জন্য করা হয়, কিন্তু লিঙ্গ শনাক্তের উদ্দেশ্যে নয়।
অনেক পরিবারের জন্য, কন্যা সন্তান বোঝা মনে করা হয়। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় পিছিয়ে থাকার কারণে কন্যাদের প্রতি বৈষম্য বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সমাজের রীতি-নীতি এবং বিশ্বাস এই বৈষম্যের পেছনে মূল কারণ।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেছেন, কন্যা সন্তান বোঝা নয়, বরং দক্ষ জনশক্তি। মায়ের গর্ভ থেকেই বৈষম্যের শুরু, যা সমাজের চিন্তাধারার কারণে প্রভাবিত হয়।
এই বৈষম্য রোধে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে। কন্যাশিশুরা যে সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায়, সেগুলোকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।