রাজধানীর কমলাপুর, বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ অন্যান্য স্টেশনে গতকাল শুক্রবার ঘরমুখো যাত্রীর প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। সন্ধ্যার পর ঢাকার প্রধান স্টেশনগুলোতে এই ভিড় অনেক বেড়ে যায়। ভেতরে জায়গা না পেয়ে ট্রেনের ছাদেও যাত্রী উঠেছে। অনেকে টিকিট কেটেও চড়তে পারেনি ট্রেনে।
এবারের ঈদ যাত্রা শুরু হওয়ার পর প্রথম দুই দিন বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঢাকা ছাড়েনি। এতে যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। সে তুলনায় গতকাল ট্রেনের সময়সূচি ঠিক ছিল।
অনেক যাত্রীর অভিযোগ, ভিড়ের কারণে টিকিট থাকলেও ট্রেনে চড়তে পারেনি তারা।
আবার কেউ কেউ কোনো রকমে অন্য বগিতে উঠেছে। চেষ্টা করছে নিজ আসনে পৌঁছার। তিতাস কমিউটার ট্রেনের যাত্রী মাহামুদ বলেন, ‘বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলে আমার জন্য সুবিধা হয়। কিন্তু সেখান থেকে ট্রেনে উঠতে পারব কি না, সেই ভয়ে কমলাপুর চলে এসেছি। এখানে ট্রেন যেহেতু অনেকক্ষণ থাকবে, তাই উঠতে পারার সম্ভাবনা বেশি।’
কিন্তু বিপত্তি বাধে সন্ধ্যার পর। ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রীর চাপে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি তেমন কাজ করেনি। হাতে টিকিট থাকলেও সিট না পাওয়ার আশঙ্কায় হুড়াহুড়ি করে যাত্রীদের ট্রেনে চড়তে দেখা গেছে। বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে যাত্রীরা ট্রেনের ছাদেও উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ যাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সে জন্য প্ল্যাটফরম এলাকার প্রবেশমুখে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে। প্ল্যাটফরমে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) দেখা গেছে যাত্রীদের টিকিট চেক করতে।
ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, সকালে যাত্রীর চাপ ছিল। এরপর সারা দিন স্বাভাবিক। তবে সন্ধ্যার পর যাত্রীর ঢল নামে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো কার্যকর রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য স্টেশন থেকে ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠলেও কমলাপুরে সে সুযোগ নেই।
এদিকে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে এবং শিডিউল বিপর্যয় রোধে গতকাল মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়েছে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল। রেলের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, গতকাল রাত ১২টার পর থেকে ঈদের পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া অন্য সব পণ্যবাহী (গুডস) ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এ ছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে আন্তর্দেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস, মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল।
রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলছেন, ‘ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিটি ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। শুধু দূরের দুটি ট্রেনের সময় বিলম্বিত হয়েছে। সেটিও হয়েছে লেভেলক্রসিংয়ের কারণে।’
গতকাল বিকেলে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জেলা পরিষদ ডাকবাংলাতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, যাত্রীদের পাশাপাশি ক্যাটল ট্রেনে গবাদি পশু পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গবাদি পশু নিয়ে মানুষ নির্বিঘ্নে ঢাকার হাটগুলোতে আসছে।