মিরপুর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাফাত রহমানের (ছদ্মনাম) গৃহশিক্ষক দরকার। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয়ে একজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ওই ব্যক্তিই তাঁর গৃহশিক্ষক হিসেবে পড়ানো শুরু করেন। সাফাতের বড় ভাই ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঢাবির নকল পরিচয়পত্র তৈরির হিড়িকতাঁর ছোট ভাইয়ের গৃহশিক্ষককে কথাচ্ছলে আবাসিক হলের নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেননি। পরে গৃহশিক্ষক স্বীকার করেন যে তিনি ঢাবির শিক্ষার্থী নন, সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী। টিউশনের জন্য তিনি নীলক্ষেত থেকে ঢাবির নকল পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন।
এ রকম শুধু একটি-দুটি ঘটনা নয় বরং বিভিন্ন সময়ে ঢাবির অধীনে থাকা সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থী নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয় গোপন করে ঢাবির নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করছেন।
আবার ঢাবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঢাবির পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও টিউশন পাওয়ার জন্য অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থী দাবি করে নকল পরিচয়পত্র তৈরি করেন। আর এই নকল পরিচয়পত্র বানানোর প্রাণকেন্দ্র ঢাবির পাশে নীলক্ষেতের কিছু মার্কেট।
মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ মোড় থেকে নীলক্ষেত-নিউ মার্কেট মোড় পর্যন্ত নীলক্ষেত রোডের পাশে সিটি করপোরেশন মার্কেটের প্রায় প্রতিটি দোকানেই চলছে এই নকল পরিচয়পত্রের রমরমা ব্যবসা। নিজের পরিচয় গোপন করে বা মিথ্যা বলে যে কেউ তৈরি করতে পারে নকল পরিচয়পত্র। মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিলেই এই নকল পরিচয়পত্র মিলছে।
সম্প্রতি সিটি করপোরেশন মার্কেটের একটি দোকানে গিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীর একটি পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে মালিক সোহাগ বলেন, একেবারে হুবহু সম্ভব না হলেও ৯০ শতাংশ কাছাকাছি বানিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে এর ভেতরকার এনএফসি চিপসেট কিংবা ওপরের হলোগ্রাম বানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। ওই প্রযুক্তি শুধু ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছেই আছে।
এরপর ওই দোকান মালিক সম্প্রতি বানানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র দেখান।
সেখানে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে। পরে ঢাবির শিক্ষার্থী নন এমন একজনের নাম-পরিচয় দিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীর একটি নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতে বলা হয়। প্রায় আধাঘণ্টা সময় নিয়ে ডিজাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর তিনি প্লাস্টিক আইডি কার্ড তৈরির বিশেষ মেশিনে ডিজাইন ইনপুট দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ‘গরম গরম’ পরিচয়পত্র তৈরি করে দেন। রঙিন আইডি কার্ডের বিনিময় মূল্য হিসেবে তিনি ৩০০ টাকা নেন।
এ বিষয়ে ঢাবির স্মার্ট আইডি কার্ড দেওয়ার দায়িত্বে থাকা অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই নকল পরিচয়পত্র দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেওয়া যাবে না। কেউ নকল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যদি লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে চান, তাহলে সেটি পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত কোনো ই-গেই এই নকল পরিচয়পত্র দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না।