ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় কিছু সময়ের জন্য ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজায় শিশুদের পোলিও টিকা দেওয়ার জন্য মানবিক কারণে যুদ্ধ বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। খবর বিবিসির।
ফিলিস্তিনে ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেছেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে গাজায় এই পোলিও টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এর মূল্য লক্ষ্য, গাজা’র প্রায় ছয় লাখ ৪০ হাজার শিশুকে টিকাদান করা। উপত্যকার কেন্দ্র, দক্ষিণ ও উত্তর অংশে ভিন্ন ভিন্ন ধাপে এই কর্মসূচি পালিত হবে। প্রতিটি ধাপে টানা তিনদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।
গাজার প্রথম পোলিও আক্রান্ত ব্যক্তি ২৫ বছর ধরে এই রোগে ভুগছেন। তার সংস্পর্শে আসার পর ১০ মাস বয়সী এক শিশু আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। জাতিসংঘের কর্মকর্তা একথা জানানোর কয়েকদিনের মাথায় এই সম্মতি এলো।
মুখে খাওয়ার পোলিও ভ্যাকসিন টাইপ-টু’র প্রায় এক দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডোজ ইতোমধ্যে গাজায় রয়েছে এবং আরও প্রায় চার লাখ ডোজ শিগগিরই পৌঁছাবে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করবে। তবে তাদের সহযোগিতা করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএনআরডব্লিউএ। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দুই হাজারেরও বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
গাজা উপত্যকার ৯০ শতাংশ এলাকাকে এই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনাটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য। এর উদ্দেশ্য, অতিসত্বর গাজায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ করা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যদি আরও একদিন প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতিও আরও একদিনের জন্য চলবে। চুক্তিতে এ বিষয়টিও উল্লেখ আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সংঘাতের আগে গাজা ও পশ্চিম তীরে টিকাদানের হার বেশি ছিল। ২০২২ সালে আনুমানিক ৯৯ শতাংশ এলাকায় টিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছর এটি ৮৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত জুলাই মাসে বলেছিল যে তারা তাদের সেনা সদস্যদেরকে পোলিও টিকা দেওয়া শুরু করেছে। হামাসের কর্মকর্তা বাসেম নাইম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “গাজা উপত্যকার সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশুর সেবা ও সুরক্ষার জন্য এই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিন দিন যুদ্ধ বন্ধ রাখাটা যুদ্ধবিরতি নয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর জেমস কারিউকি এই টিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনাকে দৃঢ়ভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন যে ৯০ শতাংশ এলাকায় টিকাদানের আওতায় আনার জন্য বিরতিগুলো আরও দীর্ঘ হওয়া প্রয়োজন।