দেশের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন বিনোদন জগতের মানুষও। কেউ সংগ্রহ করছেন ত্রাণ, সশরীরে কেউ হাজির হয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে, কেউ বা তৈরি করেছেন গান, আবার কেউ কনসার্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন তহবিল। বিস্তারিত লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
ত্রাণ সংগ্রহ-বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা
বিনোদন জগতের তারকারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে। অভিনেতা আরশ খান ও অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা তিন দিন আগেই পৌঁছেছেন বন্যাকবলিত এলাকা ফেনীতে। ২২ আগস্ট তাঁরা বানভাসি মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার ও পানি বিতরণ করেছেন। লাইভে এসে আরশ বলেন, ‘আপনারা পারলে শুকনা খাবার পাঠান।
টাকা বিকাশ করা লাগবে না। খাবার পাঠালে আমাদের জন্য বিতরণ করা সহজ হবে। বেশি খাবার হলেও সমস্যা নেই। এখানে আমরা রাখার ব্যবস্থা করতে পারব।
রুকাইয়া জাহান চমকও দলবলে গেছেন বন্যার্তদের কাছে। সঙ্গে আছেন তাঁর স্বামী আজমান নাসিরও। ২৩ আগস্ট ফেনীতে পৌঁছেছেন তিনি। সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘আমাদের অনেক শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দরকার। ফেনীতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকলেও পর্যাপ্ত রেসকিউ টিম আছে।
সবাই মোটামুটি নিরাপদেই আছে। আপনারা বরং কিছু টিম কুমিল্লা, সোনাগাজী ও খাগড়াছড়ির দিকে চলে যান প্লিজ।’
২০২২ সালে সিলেট অঞ্চলের বন্যার্তদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন গায়ক তাসরিফ খান। এবারও সবার আগে তিনি পৌঁছেছেন ফেনীতে। ডুবে যাওয়া অঞ্চল থেকে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ অঞ্চলে নিয়ে গেছেন তিনি। কুমিল্লায় আছেন নির্মাতা খিজির হায়াৎ খান ও মাবরুর রশীদ বান্নাহ। খিজির কাজ করছেন রেসকিউ টিমের সঙ্গে। বান্নাহ বিতরণ করছেন ত্রাণসামগ্রী। স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আমরান হোসেন ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলে গেছেন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে। পাশাপাশি রেসকিউ টিমের সঙ্গেও কাজ করছেন।
গতকাল প্রয়াত কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর ফাউন্ডেশন থেকেও বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চলচ্চিত্র অভিনেত্রী আইরিন সুলতানা ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দিয়ে এসেছেন ত্রাণসামগ্রী। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, অভিনয় শিল্পী সংঘ ও ডিরেক্টরস গিল্ড। পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ত্রাণ পাঠিয়েছি। আরো সংগ্রহ চলছে। কাল [আজ] আমাদের আরেকটি টিম বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে হাজির হবে। আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের নিজস্ব উদ্যোগে গতকালই এক ট্রাক শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাঠানো হয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। এখন শিল্পী সমিতির ফান্ড থেকেও বন্যার্তদের সাহায্য করা হবে বলে জানান তিনি। ডিপজল বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে শিল্পীরা সব সময় এগিয়ে এসেছে। শিল্পীদের উদ্যোগে বড় একটা ফান্ড বন্যার্তদের জন্য পাঠাব।’
ডিরেক্টরস গিল্ডের সাবেক সেক্রেটারি নির্মাতা এস এ হক অলিক বলেন, ‘বন্যার শুরু থেকেই আমরা বন্যার্তদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। গঠন করেছি ফান্ড। ব্যক্তিগতভাবেও অনেক নির্মাতা এগিয়ে এসেছেন। দেশের এই দুর্যোগময় সময়ে সবাই এক হয়ে কাজ করছি, এটাই বড় ব্যাপার। ডিরেক্টরস গিল্ড বন্যার্তদের জন্য লম্বা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনেও কাজ করবে সংগঠনটি।’
পিছিয়ে নেই অভিনয়শিল্পী সংঘও। টিভি নাটকের সংগঠনটি ত্রাণ বিতরণ করে আসছে শুরু থেকেই। এরই মধ্যে জানা গেল, বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবায়ও কাজ করবে তারা। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘বন্যা শেষ হলেও বন্যার্তদের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এ সময় পানিবাহিত নানা ধরনের রোগ হতে পারে। আমরা একটা মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। আমাদের মধ্যেই অনেকে চিকিৎসক আছেন। তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। আমরা সবাই মিলে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করব।’
গান ‘বানভাসি জীবন’
বন্যাকবলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা ছন্দে ছন্দে তুলে এনেছেন গীতিকার তারেক আনন্দ। তাঁর লেখা ‘বানভাসি জীবন’-এর সুর-সংগীতের পাশাপাশি গেয়েছেন শাহরিয়ার রাফাত। ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় গানটি রাফাতকে পাঠান। ভোর ৩টার মধ্যেই সুর ও সংগীতের কাজ সম্পন্ন করেন রাফাত, পরদিন [গতকাল] সকালে কণ্ঠ দেওয়ার পর রাতেই প্রকাশ করেছেন গানটি। রাফাত বলেন, ‘আমরা যে যার অবস্থান থেকে বন্যার্তদের জন্য কাজ করছি। এর আগে একটা গানের পুরো পারিশ্রমিক পাঠিয়েছি বানে ভাসা মানুষকে। এবার এই গান করলাম। আর্তনাদের গান এটি। শ্রোতাদের ভালো লাগলে কষ্ট সার্থক হবে।’
তারেক আনন্দ বলেন, ‘কোনো প্রতিদানের আশায় এই গান করিনি। একান্তই নিজস্ব অনুভূতি থেকে করা।’