ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

‘দোহাই লাগে হেল্প করুন’, সামাজিক মাধ্যমে হাজারো আকুতি

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক :

আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1779603 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1779603 জন
‘দোহাই লাগে হেল্প করুন’, সামাজিক মাধ্যমে হাজারো আকুতি
ছবি : সংগৃহীত

‘আল্লাহ হেফাজত করুন আমার স্ত্রী-কন্যাকে। কেউ ফেনী সদরের লালপুল বা আশপাশে থাকলে দোহাই লাগে, হেল্প করুন।’ এভাবেই স্ত্রী-সন্তানের সাহায্যের আকুতি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এক অসহায় বাবা।


হুসাইন আজাদ নামে এই বাবা চাকরিসূত্রে থাকেন রাজধানী ঢাকায়। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের বসবাস ফেনীতে। হঠাৎ দিনের ব্যবধানে বন্যা পরিস্থিতির এতটা অবনতি হবে তা ভাবতে পারেননি তিনি। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে পরিবার বা এলাকার কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারছেন না। কাজ করছে না মোবাইল নেটওয়ার্ক, চলছে না ইন্টারনেটও।


‘ভাই আমরা ৩ ছাদে ৩৭ জন আছি, পানি অনেক জোরে উঠতেছে, হয়ত ৩০ মিনিটের মধ্যে ছাদ ডুবে যাবে, আমাদের উদ্ধার করেন। স্থান- ফেনী, ফাজিলপুর, একতা ক্লাব।’ শুধু হুসাইন আজাদ নয়, এমন অসংখ্য স্বজনের পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেখানে ফুটে উঠছে আতঙ্ক-ভয় আর প্রিয়জন হারানোর শঙ্কা।



হুসাইন আজাদ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজের বার্তা সম্পাদক। তিনি আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে লেখেন, ‘বাড়িতে পানি ওঠার কারণে ফেনী শহরে বোনের বাসার উদ্দেশে রওনা দেয় আমার স্ত্রী সাবিনা সুলতানা প্রিয়া (২৬), মেয়ে আফরা সাইয়ারা হৃদি (৪) ও শ্যালিকা লিমা (২২)। আজ সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ফেনী সদরের হাফেজিয়া এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে হেঁটে লালপুলের দিকে যাচ্ছিল তারা। এখন ওদের ফোন নম্বর বন্ধ। লালপুলে প্রচুর পানির তোড়। শহরেও অনেক পানি। যারা আছেন, উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ।’

বন্যায় চার জেলায় ৮ জনের মৃত্যু

হুসাইন আজাদের মতো অবস্থা ডিবিসি নিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আদিত্য আরাফাতের। না পারছেন কিছু করতে, না পারছেন সইতে। এ অবস্থায় বাবা-মায়ের জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন বাবা-মায়ের জীবন, তার ফেসবুক পোস্টে ফুটে উঠেছে সেই অসহায়ত্ব।


‘ভাই তাড়াতাড়ি করেন। অন্ধকার হইয়া যাইতেছে, ওরা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। বাচ্চাসহ বিশজন ছাদের উপর বন্দি অবস্থায় আছে, তাড়াতাড়ি স্পিড বোট নিয়ে যান। স্থান- বক্সওয়ালি মিজি বাড়ি, পশ্চিম ছনুয়া, কাজির দীঘি, ছাগলনাইয়্যা, ফেনী।’

তিনি লেখেন, ‘আমি ভেঙে পড়েছি। হতাশ হয়ে পড়েছি। এখন শুধু পরম করুণাময় পারেন আমার মা-বাবাকে বাঁচাতে। আমার বাবা -মা কখনো বন্যা দেখেনি। ফেনী শহরের কাছে আমাদের গ্রামে কখনো বন্যা আসেনি। আমার বয়োজ্যেষ্ঠ বাবা-মা জানে না কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে হয়। ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় আমি বাবা-মায়ের কণ্ঠস্বর শুনছি না।’


তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে অনেকগুলো সাহায্যের নম্বর দেখেছি। অনেক নম্বরে যোগাযোগ করতে গিয়ে নম্বর বন্ধ দেখেছি। অনেক বড়-বড় জায়গা থেকেও আমাকে ফোন দেওয়া হয়েছে। সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। সবাই চেষ্টার কথা বলছেন। কিন্তু আমিতো আমার মা-বাবার কোনো খবরই জানতে পারলাম না। আমার আত্মীয়-স্বজন, ফেনীর সাংবাদিক, বন্ধু-বান্ধব সবার নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। আমার বাবা পারকিনসনের রোগী। মা শ্বাসকষ্টের রোগী। কেউ যদি আমার মা-বাবাকে উদ্ধার করতে পারেন আপাতত ফেনীর মূল শহরে আমার বড় ভাইয়ের বাসায় রেখে আসুন। আমার বাবা অন্তত সাহায্যকারীদের বড় ভাইয়ের বাসার ঠিকানা দিতে পারবে। বলতে পারবে। ফেনীতে আমার বাবা-মা এখন রয়েছে আমাদের গ্রামের বাড়িতে।


ঠিকানা উল্লেখ করে এ সাংবাদিক লেখেন, যারা উদ্ধার কার্যক্রমে যাবেন তাদের জন্য ঠিকানা- ফেনী সদরের নতুন রানীর হাটে। মালীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি। মূল শহর থেকে আমাদের বাড়ি খুব দূরে নয়। ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে নতুন রানীর হাট যেতে হবে প্রথমে। নতুন রানীর হাটে বাংলা রোড দিয়ে ঢুকে চারশো গজ সামনে আমাদের মজুমদার বাড়ি। বাড়িতে গেলে আমার মা-বাবাকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে আসা যাবে। আমার বাবার নাম আবদুস সোবহান মজুমদার। (আমার নাম্বার ০১৭১৭-২৬১২১৮, শুধু উদ্ধার কার্যক্রমে জড়িতরা ফোন দেবেন প্লিজ। সান্ত্বনার জন্য কল না দিয়ে প্রার্থনা করুন।)


গতকাল থেকে নানুর বাড়ির মানুষগুলো ছাদের উপর ১৫ ফুট পানির সঙ্গে লড়াই করতেছে। সর্বশেষ মামার সঙ্গে কথা হওয়ার সময় বলেছিল- সাজ্জাদ আমাদেরকে বাঁচাও...। ফোনে শুধু ছোট ছোট মামাতো বোনগুলোর চিৎকার আর কান্না শুনছিলাম। রাত হলেই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে সেখানে।’


চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে কাজ করছে ১১৯৬ মেডিকেল টিম

টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এর মধ্যে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরও অনেক হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।


এ অবস্থায় উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন এসব এলাকার বাসিন্দা ও তাদের স্বজনেরা। ফেনীর বাসিন্দা জসিম উদ্দিন লেখেন, ‘ভাই তাড়াতাড়ি করেন। অন্ধকার হইয়া যাইতেছে, ওরা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। বাচ্চাসহ বিশজন ছাদের উপর বন্দি অবস্থায় আছে, তাড়াতাড়ি স্পিড বোট নিয়ে যান। স্থান- বক্সওয়ালি মিজি বাড়ি, পশ্চিম ছনুয়া, কাজির দীঘি, ছাগলনাইয়্যা, ফেনী।’


‘আমি ভেঙে পড়েছি। হতাশ হয়ে পড়েছি। এখন শুধু পরম করুণাময় পারেন আমার মা-বাবাকে বাঁচাতে। আমার বাবা -মা কখনো বন্যা দেখেনি। ফেনী শহরের কাছে আমাদের গ্রামে কখনো বন্যা আসেনি। আমার বয়োজ্যেষ্ঠ বাবা-মা জানে না কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে হয়। ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় আমি বাবা-মায়ের কণ্ঠস্বর শুনছি না।’

 


শামিম রহমান নামে আরেকজন লেখেন, ‘আমার পরিবার ও বাড়ির মানুষগুলো সবাই ছাদের উপর আটকা পড়ে আছে। এখন সবার সাহায্যের প্রয়োজন, কারো কাছে স্পিডবোট থাকলে আমার পরিবারকে বাঁচান! স্থান- ফাজিলপুর, বটতলী বাজার, ইজ্জত আলী ভূঞা বাড়ি, ফেনী সদর।’


পরিবার ও স্বজনদের বাঁচার আকুতি জানানো এমন অসংখ্য পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেশকিছু গ্রুপের মাধ্যমে এসব পোস্টও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে। বিপরীতে বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয়রা উদ্ধারে সাড়া দিচ্ছেন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব অপ্রতুল। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়।


ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পিড বোটের প্রয়োজনের কথা জানিয়ে ফেসবুকে একজন লেখেন, ‘আশপাশের মানুষ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ আছে, তার মধ্যে নারী ও শিশু বেশি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। প্লিজ হেল্প।’


এক বড় ভাই লেখেন, ‘আমার আপন ছোট বোনের শ্বশুরবাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার ৮নং রাধানগর ইউনিয়নের পশ্চিম কাশীপুর গ্রামে। বাড়িটির অবস্থান হচ্ছে আজিম ভুঁইয়া খালের ব্রিজের সঙ্গে। এনা পরিবহনের মালিক এনায়েত উল্লাহর বাড়ির কাছাকাছি তাদের বাড়ি। আমার বোনের শ্বশুরের নাম হচ্ছে মো. ইউসুফ এবং উনার বড় ছেলে (আমার বেয়াই হচ্ছেন জয়নাল মুহুরি)। তারা বর্তমানে বন্যা আক্রান্ত অবস্থায় আছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদুৎ ও চার্জ সংকটের কারণে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক :

আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন