একধরনের গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু তা যথাসময়ে ফেরত দিচ্ছেন না। বরং বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা ছাড়ের আওতায় পার পেয়ে যাচ্ছেন। কখনো ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপি হচ্ছেন না, কখনো নামেমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। আবার কখনো ঋণ পুনর্গঠনের নামে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। বছরের পর বছর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছে। একই সাথে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে তদারকি ব্যবস্থা বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন।
গতকাল আইএমএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক বিভাগের সাথে বৈঠক করে এসব বিষয়ে পর্যালোচানা করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত কতটুকু পরিপালন করা হয়েছে সে বিষয়ে পর্যালোচনা করছে আইএমএফের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি বিদ্যমান ঝুঁকিভিত্তিক পরিদর্শন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে পর্যালোচনা করেছে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিরা। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আগাম ঝুঁকিব্যবস্থাপনা নিরূপণে ১৬টি কার্যপ্রণালী নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে ব্যাংকিং খাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে বিশদ পরিদর্শন করা হতো। এ থেকে বড় কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। কিন্তু আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় সুপারভিশন মডেল আমূল পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ঘটনা ঘটার আগেই সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকগুলোর ওপর আগাম তদারকি করা হবে। এজন্য মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সুপারভিশনের মডেলে বাংলাদেশ ব্যাংকও নতুন একটি আগাম ঝুঁকিভিত্তিক সুপারভিশন ব্যবস্থাপনার কার্যপ্রণালী তৈরি করেছে। এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদারকি করা হচ্ছে। নতুন এ মডেল কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিরা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার কম। এর বাইরে আরো কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে। মূলধন ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে এমওইউ করা হয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এদিকে, ব্যাংক খাতে গত জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বর এই তিন মাসের ব্যবধানে ঝুঁকির মাত্রা আরো বেড়েছে। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ, সুদ হার, বিনিময় হারজনিত ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। একই সাথে ব্যাংকগুলোর সার্বিক মূলধন কমেছে। তবে ঋণের স্থিতি বাড়ায় ব্যাংকগুলোর সম্পদ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এখন মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ শতাংশের বেশি রয়েছে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের কাছে। সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।