কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের নয়টি দানবাক্স থেকে পাওয়া ২৭ বস্তা টাকা গুনে মিলেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা, যা মসজিদের ইতিহাসে রেকর্ড। এর আগে এত টাকা আর পাওয়া যায়নি।
ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে নয়টি দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাসে এই বাক্সগুলো খোলা হয়। রমজানের কারণে আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) খোলা হয়েছে ৪ মাস ১০ দিন পর।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্তিতিতে আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। নয়টি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ২৭ বস্তা টাকা।
পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মোমতাজসহ ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাগলা মসজিদ ও মাদ্রাসার ৩৪ জন শিক্ষক এবং ১০২ জন ছাত্র টাকা গোনা শুরু করেন। টাকা গুনে শেষ করতে সময় লাগে টানা ১৪ ঘণ্টা।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত হোসেন বলেন, “পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। এই টাকার বাইরে দানবাক্সে মিলেছে বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণের গয়না, যার অর্থমূল্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।”
এছাড়াও, মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন অসংখ্য মানুষ।
এর আগে মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর। সেবার ৩ মাস ২০ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩টি বস্তায় ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
এই মসজিদটির নামকরণ নিয়ে দুই ধরনের জনশ্রুতি আছে। একটি মত হল, প্রায় ৫০০ বছর আগে বাংলার ১২ ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর উত্তর পুরুষ দেওয়ান জিলকদর খান ওই জায়গায় নদীর তীরে আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হয়েছিলেন। সাধারণের কাছে তিনি “জিল কদর পাগলা” নামে পরিচিতি পান। পরে ওই জায়গায় এ মসজিদ নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি “পাগলা মসজিদ” হিসেবে পরিচিতি পায়।
আরেকটি জনশ্রুতি হল, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগম “পাগলা বিবি” নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। দেওয়ানবাড়ির সেই বেগম স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নরসুন্দার তীরে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে তা “পাগলা বিবির মসজিদ” নামে পরিচিতি পায়।