ফরিদপুরের সদরপুরে ক্রমবর্ধমান তামাক চাষের প্রবণতা স্থানীয় কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামাক চাষ প্রসারের ফলে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার ও ধোঁয়াজনিত দূষণের কারণে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার কৃষ্ণপুর ও চরবিষ্ণপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তামাক ক্ষেত।
ক্ষেতে কেউ তামাকগাছের পরিচর্যা করছে, কেউ নষ্ট পাতা কাটছে। আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তামাক ক্ষেতে সার দিচ্ছে। তামাক ক্ষেতে নারীরাও পরিচর্যার কাজ করছেন। এ ছাড়া নারী ও পুরুষরা তামাক ক্ষেতে কীটনাশক ও পাতাকে বাজারজাত করতে শুকানোর জন্য নিজেদের তৈরি বিশাল চুলোতে তাপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ বছর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৩ হেক্টরেরও বেশি আবাদি জমিতে বিষাক্ত তামাক চাষ করা হয়েছে।
তামাক চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই ধান, গম ও অন্যান্য ফসলের জমিতে তামাক চাষ শুরু করেছে। এ বছর সদরপুরে হঠাৎ করেই তামাক চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের চাষের জন্য প্রলোভনমূলক প্রস্তাব দিচ্ছে, যা তামাক চাষ বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, কৃষি বিভাগের উদাসীনতা, উৎপাদনের আগে কোম্পানির তামাকের দর নির্ধারণ, বিক্রয়ের নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, কম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন, পরামর্শ দানসহ সাত কারণে অন্যান্য ফসল ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা তৈরির প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাটাখালি এলাকার তামাক চাষি তালেব উদ্দিন বলেন, ‘জমিতে খাদ্যশস্য রোপণ করে খুব বেশি লাভবান হওয়া যায় না, তাই তামাক ক্ষতিকর জেনেও লাভের আশায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই চাষ করছি।’
কুষ্টিয়া থেকে আসা আরেক চাষি নওয়াব আলী বলেন, ‘কম্পানি থেকে আমাদের বীজ, সার, কীটনাশকসহ উৎপাদনের যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
আবার তারাই তামাক পাতা কিনে নেয়। এতে আমাদের বিনিয়োগ কম, কিন্তু লাভ বেশি।
সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অশোক কুমার বলেন, দীর্ঘদিন তামাক চাষে যুক্ত থাকলে শরীরে নিউরো-টক্সিকের প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ যার মধ্যে এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস অন্তর্ভুক্ত এবং ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। তামাক উচ্চ রক্তচাপ ও প্রান্তীয় রক্তনালির রোগের কারণও হতে পারে। তাই তামাক চাষ রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, তামাক চাষ নিয়ে ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে নিয়মিত নিরুৎসাহিত করতে আমাদের কৃষি উপসহকারীরা উপজেলার মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত কাজ করছেন।