ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

দুঃসহ কষ্টে সেন্ট মার্টিনবাসী

পর্যটকশূন্যতায় থমকে গেছে রিসোর্ট-রেস্টুরেন্ট ব্যবসা

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১১.৫৬ অপরাহ্ন

আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১১.৫৬ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 520509 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 520509 জন
পর্যটকশূন্যতায় থমকে গেছে রিসোর্ট-রেস্টুরেন্ট ব্যবসা
পর্যটক না যাওয়ায় সেন্ট মার্টিনে এখন সুনসান নীরবতা। ছবি : সংগৃহীত

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনবাসীর দুঃখ যেন ছাড়ছে না। একের পর এক বিপর্যয় দ্বীপবাসীকে আটকে রেখেছে। পর্যটনশিল্প বছরের দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হলেও তারা উপার্জনের জন্য ছুটেছিল সাগরের মাছ আহরণে। কিন্তু টানা প্রায় দুই মাস মাছ ধরাও ছিল বন্ধ।


গত ১৩ জুন থেকে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর জেলেরা যেই সাগরে নৌকা-জাল নিয়ে নামবে, অমনি শুরু হলো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। সেই দুর্যোগের বহর শেষ হচ্ছে না এখনো।

স্থানীয়রা জানায়, আগে বছরের ছয় মাস পর্যটন ব্যবসা চলত সেখানে। এবার ব্যবসা হয়েছে দুই মাস।


তা-ও আবার দৈনিক দুই হাজার পর্যটক যাতায়াতসহ রাত্রিযাপনে বিধি-নিষেধ ছিল। তাতে ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমেছে অস্বাভাবিক হারে। আগে দৈনিক পাঁচ হাজার ভ্রমণকারী দ্বীপে যাতায়াত করতে পারত বছরের ছয় মাস পর্যন্ত। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ফলে তিন মাসের জন্য দৈনিক দুই হাজার করে ভ্রমণকারীর ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে।


প্রসংগত সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৮ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে। এতে বলা হয়, নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনেই ফিরে আসবে। রাত যাপন করতে পারবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে গিয়ে রাত যাপন করতে পারবে। কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি হবে না।


তা ছাড়া দ্বীপে রাতের বেলায় আলো জ্বালানো যাবে না, শব্দদূষণ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি করা যাবে না।

জানা গেছে, পর্যটন ব্যবসায় জড়িতদের দুই মাসের আয় দিয়ে সারা বছর চলতে হচ্ছে। দ্বীপবাসীর বেশির ভাগ আছে অর্থকষ্টে।


সরকারি প্রজ্ঞাপনে দ্বীপের বাইরের যেকোনো লোককে আইডি কার্ড সহকারে সরকারি অনুমতি নিয়ে আসা-যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে দেশের নানা প্রান্তে থাকা দ্বীপবাসীর আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত  সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত বন্ধ করেছেন।


স্থানীয়রা বলেছেন, ফি বছর কোরবানির সময় দ্বীপের বাসিন্দারা অন্তত দেড় থেকে দুই শ গরু কোরবানি দিলেও সেই সংখ্যা এবার অর্ধশতে নেমে এসেছিল। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নূরুল আলম গতকাল বিকেলে  বলেন, ‘একদিকে পর্যটন ও মাছ ধরার ওপর  নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে প্রকৃতির নিষেধাজ্ঞায় আমরা দ্বীপের হতভাগ্য মানুষগুলো হাবুডুবু খাচ্ছি।  একের পর এক দুর্যোগ যেন আমাদের পেছনে লেগে আছে। কোরবানির ঈদের পর থেকেই আবহাওয়া খারাপ যাচ্ছে। এ কারণে সাগরেও মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা।’


স্থানীয়রা জানায়, এই দ্বীপে মাছ ধরার বিষয়টি নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়ার ওপরই নির্ভর করে দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফের নৌ যোগাযোগও। গতকাল সোমবার তিনটি পণ্যবাহী কার্গো নৌকা টেকনাফ থেকে নিত্যপণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে দ্বীপের উদ্দেশে। কিন্তু নাফ নদের মোহনায় নৌকাগুলো গিয়েই প্রচণ্ড বাতাস আর সাগরের উত্থাল ঢেউয়ের মুখে পড়ে পেছনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। নৌকাগুলোতে থাকা কাঁচাপণ্য অর্থাৎ সবজি-তরিতরকারি এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়।  তার ওপর এক-দুই দিন থাকলে এসব খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দ্বীপের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ রকম অনিশ্চিত নৌপরিবহনের কারণে বারবার পুঁজি হারিয়ে পথে বসেন।


জানা গেছে, দ্বীপে পর্যটন ব্যবসাও নেই। অর্ধশতাধিক রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। ২০৯টি রিসোর্ট ও কটেজ বন্ধ। দ্বীপে ৫০টির বেশি রেস্টুরেন্টের দেড় হাজার কর্মচারী বেকার। দ্বীপের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আমি নিজেও পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। আমার ঘরের এক পাশে ছয়টি কক্ষ ভাড়া দিই। মৌসুমি পর্যটন ব্যবসার আয়ে সারা বছর আমাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।’ তিনি জানান, গত বছরের আগের মৌসুমে আমি পর্যটন ব্যবসায় সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি আয় করি। কিন্তু সরকারের পরিপত্র জারির পর গেল মৌসুমে মাত্র দেড় লাখ টাকার মতো আয় হয়েছে। এ কারণে এবার আর্থিক সংকট যাচ্ছে।’


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দ্বীপের বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন জানান, ‘আমরা দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের পর্যটন ব্যবসা প্রসারের জন্য একটি ওয়েবসাইট করতে যাচ্ছি। এ জন্য স্থানীয় বাসাবাড়িতে থাকা রিসোর্টগুলোর নামধাম সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, বলতে গেলে কমিউনিটি পর্যটনকে গুরুত্ব দিতেই এমন উদ্যোগ। যেহেতু দ্বীপবাসী পর্যটন ব্যবসায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, সে জন্য তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।


দ্বীপের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দীন গতকাল বলেন, দ্বীপের পর্যটন অর্থনৈতিক অবস্থা একটু খারাপ রয়েছে। তবে অন্যান্য দিকে আগের তুলনায় কিছুটা ভালো রয়েছে বলা যায়।  সদ্যঃসমাপ্ত ঈদুল আজহায় লোকজন একটু কষ্টে ছিল। তাদের কোরবানির কথা চিন্তা করে তিনটি গরু দ্বীপবাসীর জন্য পাঠানো হয়েছিল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১১.৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১১.৫৬ অপরাহ্ন