ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

ধান সংগ্রহ শুধুমাত্র দুই উপজেলায়, ক্ষুব্ধ কৃষক গুদাম কর্মকর্তাদের হয়রানিতে

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.২৪ অপরাহ্ন

আপডেট : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.২৭ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1036852 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1036852 জন
ধান সংগ্রহ শুধুমাত্র দুই উপজেলায়, ক্ষুব্ধ কৃষক গুদাম কর্মকর্তাদের হয়রানিতে
ছবি : সংবাদদাতা প্রেরিত।

চট্টগ্রামে চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহ হয়েছে শুধুমাত্র সন্দ্বীপ ও ফটিকছড়ি উপজেলায়। নগর ও জেলার অন্য উপজেলায় সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেননি কৃষকেরা।সরকার চট্টগ্রাম থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ হাজার ৮১৮ টন। যা সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশের কাছাকাছি।


 কৃষকদের অভিযোগ, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। উৎকোচ ছাড়া ধান নিতে চায় না। তাই কৃষকেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কৃষক যাতে ধানের ভালো দাম পায়। কৃষক ধানের ভালো দাম পাচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য অনেকটা পূরণ হচ্ছে।


খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার সন্দ্বীপ থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ২৫৬ দশমিক ৬৮০ টন। ফটিকছড়ি থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৩০ টন। দুই উপজেলা থেকে ২৮৬ দশমিক ৬৮০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। 

বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের চাষি কুমকুম দাশ বলেন, খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে কৃষককে নানাভাবে হয়রানি করে। ধানের পরিমাপে কারচুপি ও আর্দ্রতার নামে ওজনে ৩০-৪০ শতাংশ বাদ দেয়। এতে কৃষকের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলে আসায় কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকের বাড়ি থেকে আড়ি ৩৩০ টাকা ধরে কিনে নিচ্ছে। যা কেজিপ্রতি ৩৩ টাকা। সরকার এলাকাভিত্তিক ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করলে তা সফল হবে।


সরকারও কৃষকদের কাছ থেকে ৩৩ টাকা ধরে ধান কিনছে, তারপরও কেন অনীহা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষক এখন ৩৩ টাকা পাচ্ছে। কিন্তু গুদামে ওজনে কারচুপি ও আর্দ্রতার নামে ধানের ওজন কমে যাচ্ছে। যা ৩০ টাকাও দর পড়ে না।

আমুচিয়া গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, সরকারি খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রিতে গুদাম কর্মকর্তাকে কমিশন (ঘুষ) দিতে হয়। কমিশন না দিলে হয়রানি করা হয়। অনেক সময় ধান নিয়ে ফেরত আসতে হয়। ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পাড়া-গাঁ থেকে আরও বেশি দামে কিনে নেয়। কোনো দুঃখে চাষিরা খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রি করবে।


এদিকে নগরীর চাক্তাই, পাহাড়তলী এবং জেলার রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের ৫ মিল মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বললেন, সরকারের শর্ত মতে ‘মান’ বজায় রেখে চাল দিলে বেশি লোকসান গুনতে হয়। বড় লোকসানের ভয়ে খাদ্য অধিদপ্তর ও গুদাম কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে চাল দিতে হয়। চালের ধরন ও মানের উপর ভিত্তি করেই উৎকোচ গুনতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি ও নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করে সরকারের কাছে বিক্রি করেছেন ওই ব্যবসায়ী। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারের কাছে নিম্নমানের চাল বিক্রি করে আসছেন তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম বলেন, চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৯০ শতাংশের ওপরে সংগ্রহ করা হবে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিলার বলেন, চার-পাঁচজন মিলার ছাড়া বেশির ভাগ মিলের নামে চাল দিয়েছেন এক ব্যবসায়ী। তবে তাকে ধরাছোঁয়া যাবে না। কারণ সরকারের টাকা জমা হয়েছে চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকের নামে। ওই মিল মালিকের কাছ থেকে আগে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের চেক নিয়ে নিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।


এদিকে ধান সংগ্রহ হতাশাজনক হলেও চাল সংগ্রহে সন্তুষ্ট খাদ্য বিভাগ। সিদ্ধ চালের ৮০৮ টনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৬৭৪ টন। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজার ৯৪৪ দশমিক ৩৪০ টন। আতপ চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮ হাজার ৪৭৩ টন। চলতি আমন মৌসুমে সরকার প্রতিকেজি আতপ চাল কিনছে ৪৬ টাকা দরে। সিদ্ধ চাল কিনছে ৪৭ টাকায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুতে চাল সংগ্রহও হতাশাজনক। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করা অনেক মিলার সরকারের কাছে চাল বিক্রিতে অনীহা প্রকাশ করেছিল। তবে চাক্তাই চালপট্টি এলাকার একজন ব্যবসায়ী অন্যদের পক্ষে হয়ে বেশির ভাগ চাল বিক্রি করেছেন। খাদ্য কর্মকর্তা ও গুদাম কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই ওই ব্যবসায়ী একচেটিয়া চাল বিক্রি করেছেন।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.২৪ অপরাহ্ন
আপডেট : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.২৭ অপরাহ্ন