গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের ওপর আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার ঘটনায় ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০০-৪৫০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
গতকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে টুঙ্গিপাড়া থানার এসআই রাব্বি মোরসালিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি সাফায়েত গাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এলাকাবাসী জানায়, পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে সাঁজোয়া যান নিয়ে সারারাত টুঙ্গিপাড়া থানা পাহারা দিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট। এ ঘটনার পর থেকে টুঙ্গিপাড়া পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার বিকেলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদরের খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ দলীয় লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে সন্ধ্যার পর স্কুল এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সাফায়েত গাজীকে আটক করে গাড়িতে তোলে টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশ। এ সময় স্থানীয়রা পুলিশের গাড়ির গতিরোধ করে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত নারী-পুরুষ সাফায়েত গাজীকে পুলিশ ভ্যান থেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে। ইটের আঘাতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। এই খবর থানায় পৌঁছলে অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে তারাও স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন।পরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার ওসির নিকট হস্তান্তর করেন।
টুঙ্গিপাড়া থানার পরিদর্শক ওসি মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আটক সাফায়েত গাজীকে ছিনিয়ে নিতে স্থানীয়রা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ এনে অভিযুক্ত সাফায়েত গাজীকে প্রধান করে ১০৫ জনের নামে এবং ৪০০/৪৫০ জনেকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি সাফায়েতকে গ্রেপ্তার করে আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ পাহারা জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক বলেন, ‘পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও এক পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে ঘটনার স্থলে যাই। তখন উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে শান্ত করে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার ওসির কাছে বুঝিয়ে দেই। বর্তমানে পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’