ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি: উদ্বেগ বাড়ছে

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.৫৭ অপরাহ্ন

আপডেট : শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.৫৭ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1065913 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1065913 জন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি: উদ্বেগ বাড়ছে
ফাইল ছবি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের সামনে যেসব বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসে তার মধ্যে অন্যতম আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় অপরাধ দমন কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছিল। নতুন সরকার ঢাকায় পুলিশের জনবলে ব্যাপক পরিবর্তন আনে।


পুলিশের সর্বোচ্চ পদ আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পদে পরিবর্তন আনা হয়। তারপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। এর ফলে দিনে-দুপুরে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি বেড়েছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও। পুলিশ সদর দপ্তর, হাসপাতাল ও হতাহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেশে গত বছরের শেষ পাঁচ মাসে এক হাজার ৫৬৫ জন খুন হয়েছে। এতে প্রতি মাসে গড়ে খুন হয়েছে ৩১৩ জন। এ সময় হামলাকারীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রে দেড় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। চলতি বছরের শুরুতেও এই অপরাধমূলক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারি মাসেও দেশে প্রতিদিন একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।


অন্যদিকে, ডিএমপি ও পুলিশের তথ্যমতে, রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। পুলিশের দেওয়া তথ্য শুধু মামলার পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু ছিনতাইয়ের প্রকৃত ঘটনা অনেক বেশি। যার বেশিরভাগই থানায় নথিভুক্ত হচ্ছে না। অধিকাংশ ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করছেন না, কেউ কেউ হারানো বলে জিডি করছেন। যারা শারীরিকভাবে জখম, মারধর কিংবা নিহতের মতো ঘটনা ঘটছে, কেবল সেসব ক্ষেত্রে হচ্ছে মামলা বা অভিযোগপত্র জমা পড়ছে। জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস থেকে ছিনতাইকারীরা আরও যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বস্ব কেড়ে নিতে মারমুখী হয়ে উঠছে ছিনতাইকারীরা। গত পাঁচ মাসে ঢাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ গেছে অন্তত ৭ জনের। গত চার মাসে ছিনতাই-অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় হাজারখানেক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি। শুধু ছিনতাই নয় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটছে প্রতিনিয়ত। প্রকাশ্যে ঘটছে চুরি, ডাকাতির মতো ঘটনা। মহাসড়কে চলন্ত গাড়িতেও ডাকাতি বেড়েছে। ছিনতাই হচ্ছে মালবাহী ট্রাকও। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। এদিকে, প্রতিদিন রাজধানী বা ঢাকার বাইরে চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটছে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতি।



এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হলেও বেশির ভাগ অপরাধী অধরা। তারা আরো অপরাধে জড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী, খাল-বিল, মাঠ, ঝোপ-জঙ্গল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে চুরি-ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতির মতো অপরাধমূলক ঘটনা বেড়েছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়া মানে সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। তাঁদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর ব্যর্থতার কারণেই মূলত এসব ঘটছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করে জনমনে শান্তি ফেরাতে হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের গত এক বছরের তথ্য বলছে, দেশে ২০২৪ সালে তিন হাজার ৪৩২ জন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ খুন হয়েছে। এর মধ্যে পেশাজীবীর সংখ্যা বেশি।



গত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এক হাজার ৫৬৫ জন খুন হয়। এর আগের সাত মাসে খুন হয় এক হাজার ৮৬৭ জন। এই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ২৬৭ জন খুন হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সাধ্যমতো কাজ করছে। কিন্তু কিছু সামাজিক অপরাধের কারণেই খুনের পরিসংখ্যান বাড়ছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কথা স্বীকার রেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছে। তবে বাহিনীটির কাজের গতি কম থাকার কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে পালানো ৭০০ আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী বাইরে এসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে তাদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।



অপরাধ বিশ্লেষকরা বলেছেন, চুরি বা ছিনতাইয়ের সাথে এখন যারা জড়িত, এটাকে তারা কাজ বা পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। এসব করেই তাদের আয়-রোজগার হয়। চুরি-ছিনতাই করে তাদের জীবন চলে। আগে মাদকাসক্ত ব্যক্তি বা একেবারে অভাবে পরা লোকজন চুরি-ছিনতাইয়ের মতো কাজ করতেন। চুরি-ছিনতাইয়ের মামলায় অভিযুক্ত যারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তারা অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের ধারণা, খুব সহজে জামিন পেয়ে যাবেন, তাদের তেমন কোনো সাজা হবে না। এদের পেছনে সিন্ডিকেট ও পৃষ্ঠপোষক আছে। এক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ রেখে আইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সময়ের পরিক্রমায় চুরি-ছিনতাই বড় অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। নিরাপত্তার বিষয়ে সাধারণ জনগণকে ভাবিয়ে তুলছে। মানুষ এখন আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে আছে।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট : শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১.৫৭ অপরাহ্ন