প্রকৃতির অপার নান্দনিক সৌন্দর্যের উন্মুক্ত নন্দনকানন বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরিঞ্জা এলাকা। এখানে মেঘ ও পাহাড়ের প্রেমময় মিতালি দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করছে। এখানকার সবুজ পাহাড়ের সঙ্গে শুভ্র মেঘের নিবিড় মেলামেশা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে ভ্রমণপ্রেমী এসব পর্যটক। মিরিঞ্জা ও সুখিয়া দুখিয়া পাহাড়ি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে লামায় দেখা দিচ্ছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।
প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসু মানুষরা প্রতিনিয়ত ছুটেছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তরে। বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য যেন বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ। তাইতো এই নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাখ লাখ ভ্রমণপিপাসু মানুষ প্রতিদিন পার্বত্য জনপদের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করছেন। পার্বত্যাঞ্চলে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে এত দিন খাগড়াছড়ি জেলার সাজেক প্রথম পছন্দ হলেও সম্প্রতি দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্যে ভরপুর চোখ জুড়ানো রোমাঞ্চকর সবুজ পাহাড়ের বিরানভূমি লামার মিরিঞ্জা পাহাড় এলাকা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সেবা দিতে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, মিরিঞ্জা ভ্যালি, মারাইংছা হিল, সানসেট, মেঘবেলা, ডেঞ্জার হিল, টপ পয়েন্ট ভিউ, চুংদার বক, সবুজ দিগন্ত রিসোর্ট, মারাইংছা ওয়াইল্ডসহ বেশ কয়েকটি রিসোর্ট। এসব রিসোর্টের কর্টেজ, জুম ঘর ও তাঁবুতে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণে আসা পর্যটক রাত্রিযাপন করে প্রকৃতির রোমাঞ্চকর মুহূর্ত উপভোগ করছেন।
কক্সবাজার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট ওপরে মিরিঞ্জার সুউচ্চ পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যায় শুধুই সবুজের সমারোহ হাতছানি দেয়। উঁচু উচুঁ পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোটাছুটি করছে সাদা মেঘের ভেলা, জুম ঘরের বারান্দায় বসে রাতের জোনাকি হাতের স্পর্শের অনুভূতি যেন প্রাণ ভরিয়ে দেয় পর্যটকদের।
এ ছাড়া লামা বাজার ঘেঁষে বয়ে গেছে পাহাড়কন্যা স্রোতস্বিনী নদী মাতামুহুরি। চাইলে নৌকাযোগে এই নদী ভ্রমণে যেতে পারেন পর্যটকরা, দুখিয়া-সুখিয়া পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নদী মাতামুহুরীর বাঁকে বাঁকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে বিমোহিত করবে সবার মনকে।
বাংলাদেশের যেকোনো জোয়গা থেকে সহজেই এখানে আসা যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস্ এবং হানিফ বাস সার্ভিসে লামা আলিকদমের গাড়িতে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে লামা মিরিঞ্জা এলাকায় নামতে হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম- কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া নেমে ও যাত্রিবাহী বাস, কিংবা সিএনজি ও জিপে করে আসা যায়, তবে আসার আগে পছন্দের রিসোর্ট বুকিং দিয়ে আসতে হবে।
লামা উপজেলা ভৌগোলিকভাবে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার সন্নিকটে, তাই লামার পর্যটন স্পটগুলোতে আসতে তেমন দুর্ভোগের শিকার হতে হয় না। মাদারীপুর থেকে ঘুরতে আসা মজিদুল ইসলাম ও রবিউল দুই বন্ধু জানান, ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখে তারা লামার মিরিঞ্জা ভ্যালিতে ভ্রমণে আসেন। তাদের কাছে জানতে চাইলে এখানে ঘুরতে এসে তেমন কোনো সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি। তবে মিরিঞ্জা ভ্যালি ও মারাইংছা হিলে ওঠার পাহাড়ি রাস্তাটা আরেকটু উন্নত হলে নারী পর্যটকরা সহজে পাহাড়ে গমন করতে পারত বলে জানান ভ্রমণে আসা পর্যটকরা, অন্যান্য জেলার পর্যটকদের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার পর্যটকদের আসা-যাওয়াও বেশ চোখে পড়ার মতো।
লামা উপজেলার টিটু, মিজানুর রহমান, মো. ইব্রাহিম, মো. রাজু, মো. জিহাদসহ আরো বেশ কয়েকজন যুবক মিলে পর্যটকদের সেবা দিতে নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মারাইংছা হিল ভিউ। পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা ও থাকা-খাওয়ার কোনো ঘাটতি তারা রাখেনি। যার ফলে প্রতিদিন এই স্পটের জুমঘরগুলোতে ৬০-৭০ জন পর্যটক থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া মিরিঞ্জা ভ্যালিতে ও পর্যটকদের আসা-যাওয়া চোখে পড়ার মতো, সবগুলো পর্যটন স্পট একসঙ্গে লাগুয়া হওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমণে অসুবিধা হয় না তেমন।
বান্দরবানের অন্যান্য উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পাহাড়ি উগ্রপন্থীরা সাময়িক কিছু বিশৃঙ্খলা করলেও এ পর্যন্ত লামা উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। যার কারণে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণের জায়গা হিসেবে লামার পর্যটন স্পটগুলো বেছে নিয়েছেন।
লামা উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান চৌং বলেন, মিরিঞ্জা একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পানি, বিদ্যুৎ ও রাস্তার ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা হবে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বান্দরবানে নিযুক্ত ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, স্থানীয় লোকাল থানায় গুরুত্বসহকারে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য। লামার সুশীল সমাজের কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, সরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে লামার পর্যটনশিল্প ব্যাপকভাবে সাড়া জাগাবে সারা দেশে।