ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

ভারত হয়ে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয়

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

| অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকা :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০.৫৬ অপরাহ্ন

আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০.৫৬ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1442644 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1442644 জন
ভারত হয়ে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয়
ছবি : সংগৃহীত

দেশে ৬০ শতাংশ অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে নেপাল থেকে ভারতের উপর দিয়ে মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ৭ টাকা দরে ক্রয় করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ আমদানিতে বুঝে-শুনে এগোনো উচিত। জানা গেছে ভারতের পর নেপাল থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। নেপাল থেকে যে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে তা প্রতি ইউনিটের দাম ৬ দশমিক ৪ সেন্ট, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৭ টাকা। কিন্তু জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ শূন্য হওয়ায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকার মধ্যে। কিন্তু সেই বিদ্যুৎই নেপাল থেকে সাড়ে ৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা। তাদের মতে, ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের পর নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। উপমহাদেশে বাংলাদেশই প্রথম কোনও দেশ, যারা একসঙ্গে ভারত এবং নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এই নীতি অনুসরণ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরস্পর সহযোগী হলে এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোর পরস্পর সহযোগী মনোভাব প্রয়োজন। গত ১৫ নবেম্বর নেপাল থেকে ভারতীয় গ্রিড লাইন দিয়ে বাংলাদেশে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ প্রবেশ করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে এদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে নেপাল। দেশটি থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়েছিল। তবে পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৩৮ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর বিষয়টি ছিল পরীক্ষামূলক। সব কিছু ঠিক আছে কিনা, যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে সহসাই বাণিজ্যিক সরবরাহ শুরু করবে নেপাল।


ভারতের সঙ্গে নেপালের গ্রিড লাইন রয়েছে। সেই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ ভারতে প্রবেশ করছে। সেখান থেকে ভারতীয় গ্রিড লাইন ব্যবহার করে ভেড়ামারা দিয়ে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘এর আগে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি আমাদের সঙ্গে একপক্ষীয় চুক্তি করেছে। এই চুক্তিগুলোতে আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎও বাড়তি দামে কেনা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে কমদামে বিদ্যুৎ দেওয়ার যে চিন্তা, তা এই চুক্তির মাধ্যমে সম্ভব হবে না।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখি। আমাদের দেশে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে; যেগুলো অলস পড়ে আছে। সেখানে কেন আমাদের অন্য একটি দেশ থেকে এত অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সরাসরি নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হলে আমাদের জন্য লাভজনক হতো। কিন্তু ভারত হয়ে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসায় সেখানে আমাদের বিরাট অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।’ ফলে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।জানা গেছে, নেপাল এবং ভুটানে প্রায় ১ লাখ মেগাওয়াট জলবিদ্যুতের উৎস রয়েছে। এসব উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে প্রতিবেশীরা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ভারত তাদের ভূখন্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশকে গ্রিড লাইন নির্মাণ করতে দিতে চায় না। এ বিষয়ে আগে আইন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির সরকার। বর্তমানে আইনটি বাতিল করা হলেও তাদের অবস্থান একই রয়েছে। ভারত তাদের দেশের কোনও কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির কাজ করে দিতে চায়। সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানি করলে যে সুবিধা পাওয়া যেতো ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে আসলে তা পাওয়া সম্ভব না। জানা গেছে,  ১১০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে এবং উৎপাদন ছাড়াই সেগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার কথা বলে ২ বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১২ সালে ২ বছর, ২০১৪ সালে ৪ বছর, ২০১৮ সালে ৩ বছর এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৫ বছরের জন্য এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আদালত এ আইন অবৈধ ঘোষণা করেছে।  অনুসন্ধানে দেখা যায় এ ধরনের বেসরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্র কখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি বা খুব কম সংখ্যক বিদ্যুৎ উৎপাদনে গেলেও এর পরিমাণ হল তাদের সক্ষমতার ১-২ শতাংশ। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলো অধিকাংশ সময়েই উৎপাদনবিহীন অলস সময় পার করেছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে সরকারি হিসেবে ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সাধারণত ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাপ প্রবাহের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে। এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান করা হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা (ওভারক্যাপাসিটি) তৈরি হওয়ায় সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)।  এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার (ইনস্টলড ক্যাপাসিটি) মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে, যা এক বছর আগেও ছিল ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে। স্পষ্টতই ওভার ক্যাপাসিটি বাড়ছে। এর ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবিকে সরকারের প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (৮৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ভর্তুকি দিতে হয়েছে।  


আইইইএফএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সাল নাগাদ আরও ২১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। এই সময়ে মাত্র সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে। এতে স্থাপিত সক্ষমতার ব্যবহার ৪০ শতাংশেরও নিচে নেমে যাবে যদি না বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি বাড়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওভারক্যাপাসিটির বিরূপ প্রভাব পড়বে পিডিবির আর্থিক অবস্থা এবং বিদ্যুতের দামের ওপর। পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া বেসরকারি ও সরকারি কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রলোর বিদ্যুৎ কেনার স্বল্প (রেন্টাল) ও দীর্ঘমেয়াদি (আইপিপি বা ইন্ডিপেডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) চুক্তি (পাওয়ার পারচেজিং এগ্রিমেন্ট) থাকে।  এসব কেন্দ্রে ব্যবহৃত তেল, গ্যাস, কয়লা বা জ্বালানির মূল্য দেয় পিডিবি, দেওয়া হয় বিদ্যুতের দাম, সারা বছর কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি ইউনিট অর্থ বরাদ্দ থাকে। এ ছাড়া কেন্দ্রটির একটি ভাড়া দেওয়া হয় যা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নামে পরিচিত। যখন কোনো কেন্দ্র থেকে সরকার বিদ্যুৎ নেয় না তখন জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম দেওয়া বন্ধ থাকে কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্র ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ ঠিকই পরিশোধ করতে হয়। একটি ১০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রকে বছরে শুধু কেন্দ্র ভাড়াই দিতে হয় প্রায় ৯০ কোটি টাকা। সে কারণে বিদ্যুতের প্রয়োজন না থাকলে কেন্দ্র অলস বসে থাকলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারের লোকসান হয়। এর ফলে বছর শেষে পিডিবির আর্থিক ক্ষতি পোষাতে সরকারকে বিপুল অঙ্কের টাকা ভর্তুকি দিতে হয় ।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

| অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকা :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০.৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০.৫৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ