ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস কূপ খনন করা হয়নি

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদন:
নিউজটি দেখেছেনঃ 1643536 জন
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1643536 জন
দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস কূপ খনন করা হয়নি
ছবি : সংগৃহীত

দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস কূপ খনন করা হয়নি। ফলে বাড়েনি গ্যাসের উৎপাদনও। স্থানীয় গ্যাসের মজুদ খুঁজে বের করতে টুডি, থ্রিডি ও মাল্টিক্লায়েন্ট জরিপের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তবে জরিপ কার্যক্রম দেশে গ্যাসের নতুন মজুদ বৃদ্ধিতে খুব সামান্যই ভূমিকা রাখতে পেরেছে। ভোলা ছাড়া আর কোথাও গ্যাসের বড় কোনো মজুদ পাওয়া যায়নি। অথচ বিগত দেড় দশকে দেশের স্থলভাগ ও সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে প্রায় ৫০ হাজার লাইন কিলোমিটার (জরিপের অধীন এলাকার দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক) এলাকায় জরিপ চালানো হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশে গ্যাস ক্ষেত্র ছিল ২৩টি। বর্তমানে তা ২৯টিতে উন্নীত হয়েছে। গত দেড় দশকে নতুন যে ছয়টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেখানে গ্যাসের বড় কোনো মজুদ পাওয়া যায়নি। নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে নোয়াখালীর সুন্দলপুর গ্যাস ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ও নিশ্চিতকৃত মজুদ (টুপি-প্রুভেন অ্যান্ড প্রবাবল রিজার্ভ) ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এ ছাড়া কুমিল্লার শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ডে মজুদ পাওয়া যায় ১৬১ বিসিএফ, রূপগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডে ৩৩ বিসিএফ, সিলেটের জকিগঞ্জে সামান্য কিছু গ্যাসের মজুদ পাওয়া যায়। এর বাইরে স্থলভাগের মূল ভূখণ্ডে ভোলা জেলায় ভোলা নর্থ ও ইলিশায় অন্তত ৮০০ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেছে। কিন্তু পাইপলাইন না থাকায় তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাচ্ছে না। ভোলার ওই গ্যাস এখন কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। জ¦ালানি বিভাগ এবং জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।


সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাসের নতুন মজুদ আবিষ্কারে জরিপের পাশাপাশি প্রয়োজন নতুন কূপ খননও। কিন্তু দেশের স্থলভাগে বিশেষ করে পশ্চিম অঞ্চল এবং পাহাড়ি এলাকায় কোনো গ্যাসের কূপ খনন করা যায়নি। অথচ ওসব এলাকায় কূপ খনন করা গেলে গ্যাসের মজুদ পাওয়ার বড় সম্ভাবনা ছিল। পেট্রোবাংলার কাছে দেশের যে পরিমাণ জরিপের তথ্য আছে; তা দিয়ে কোথায় কোথায় এ সম্পদ আছে তা বোঝা যায়। ওই গ্যাসের মজুদ নিশ্চিত হতে কূপ খনন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাপেক্সের সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি কারিগরি সহায়তার প্রয়োজন হলে বিদেশী কোম্পানিকে সংযুক্ত করতে পারেপেট্রোবাংলা। আর তা করা গেলে তেল-গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনাও বাড়ে।


সূত্র জানায়, দেশে বিগত ২০০৮ সাল পর্যন্ত গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে স্থলভাগে টুডি সিসমিক সার্ভে করা হয়েছিল ২০ হাজার ১৭ লাইন কিলোমিটার এলাকায়। এখন তা ৩২ হাজার ৩১৫ কিলোমিটারে (জুন ২০২৩ পর্যন্ত) উন্নীত হয়েছে। বিগত দেড় দশকে নতুন করে ১২ হাজার ৩৩৪ লাইন কিলোমিটার টুডি সিসমিক জরিপ করা হয়েছে। তাছাড়া ২০০৮ সাল পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে ১ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার থ্রিডি সিসমিক সার্ভের তথ্য ছিল। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক জরিপ হয়েছিল ৫৫৭ লাইন কিলোমিটার এলাকায়। বর্তমানে ওই এলাকার পরিমাণ ১৯ হাজার ৮৬৮ লাইন কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া গত দেড় দশকে সাগরে ১২ হাজার ৯৩২ লাইন কিলোমিটার এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ চালানো হয়। ওই জরিপের ওপর নির্ভর করেই পেট্রোবাংলা সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে।


সূত্র আরো জানায়, তেল-গ্যাস জরিপের বিপুল পরিমাণ তথ্য বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার হাতে থাকলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। শুধু জরিপ নয়, ওসব এলাকায় গ্যাসের মজুদ নির্ণয়ের জন্য গত দেড় দশকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কূপও খনন করা হয়নি। বরং গ্যাসের সহজ সমাধানের জন্য এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে।


এদিকে দেশে বর্তমানে ৫০টি নতুন কূপ খনন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে ১৫টি কূপ খনন করে ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত হওয়া গেছে। নতুন করে ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে পেট্রোবাংলা ওই কূপ খনন করতে চায়। গ্যাস কূপ খননে বাপেক্সকে শতভাগ কাজে লাগিয়ে এ কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পেট্রোবাংলা নতুন করে ১০০ গ্যাস কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। বাপেক্সের রিগগুলো শতভাগ কাজে লাগিয়ে ওসব কূপ খনন করা হবে। এজন্য আগামী ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার নিজস্ব তহবিল এবং সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে এ সহায়তা পাওয়া গেলে শতভাগ সফল হওয়া সম্ভব।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদন:

আপডেট :
সর্বশেষ সংবাদ