চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ডিবি পুলিশ, পিবিআই ও র্যাব পরিচয় দিয়ে অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করার অপরাধে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এ রকম পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি বা ছিনতাই করলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানাকে জানাতে বলেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয় দিলে সাধারণ মানুষ বাধা দেয় না।
সেই সুযোগটাই নিয়ে থাকে অপরাধীচক্র। জনগণকে এসব বিষয়ে প্রটেস্ট করা উচিত। এ রকম পরিচয় দিয়ে কেউ টাকা-পয়সা বা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানায় জানানো উচিত।’
পুলিশ ও র্যাব সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ২৫ মার্চ ভাড়া করা প্রাইভেট কারে হাটহাজারীতে ফিরছিলেন নুরউদ্দিন আশরাফী নামের এক ব্যক্তি।
কিন্তু চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার লিংক রোড এলাকায় পৌঁছামাত্র হাতে ওয়াকিটকির ইশারায় গাড়ি থামানোর সিগন্যাল দেয় তিন-চার জন ব্যক্তি। নুরউদ্দিন গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা গাড়িতে উঠে যায়। তারপর কোতোয়ালি থানার সিআরবি এলাকায় নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বর্ণালংকার, একটি আইফোনসহ চারটি মোবাইল ফোনসেট, তিনটি ল্যাপটপসহ বিভিন্ন মালপত্র হাতিয়ে নেয় চক্রটির সদস্যরা। এরপর পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ যুবককে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন মালপত্র।
গত ২৪ মার্চ ডিবি পরিচয় দিয়ে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা মোড় থেকে অপহরণের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাহাড়তলী এলাকায় র্যাব পরিচয় দিয়ে বাস, টেম্পো ও সিএনজিতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে চারজনকে ২০ এপ্রিল গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও অপহরণের অভিযোগে ১৩ এপ্রিল বায়েজিদ এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করা চক্রের দুজনকে বায়েজিদ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১০ এপ্রিল।
৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে পিবিআই পরিদর্শক পরিচয়ে প্রতারণা করা এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এই চক্রটি মাইক্রোবাসে করে ছিনতাই করে থাকে। এরা প্রথমে অটোরিকশা ভাড়া করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ পরিচয় দিয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে, আর ড্রাইভারকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে নির্জন স্থানে ড্রাইভারকে ফেলে দেয়।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ওসি ওবায়দুল হক জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওয়াকিটকি হাতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিরা বিমানবন্দর থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালপত্র কেড়ে নিত। এই চক্রটি বিভিন্ন বেকারি ও ফ্যাক্টরিতে ম্যাজিস্ট্রেট সেজে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও টাকা নিয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি বলেন, ‘এ রকম আরো দু-একটি সিন্ডিকেট আছে। বেশির ভাগ সদস্যই ধরা পড়ে গেছে। বাইরে যারা আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। সাধারণ মানুষকেও এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা আছে। এই কারণে কেউ কেউ ভুয়া পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে আসছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সামাজিক ও ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই।’