ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

গ্রামের পর এবার ঢাকায়ও বাড়ছে লোডশেডিং

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ


আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1894993 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1894993 জন
গ্রামের পর এবার ঢাকায়ও বাড়ছে লোডশেডিং
ছবি : সংগৃহীত

গ্রামের পর এবার রাজধানী ঢাকায়ও বাড়ছে লোডশেডিং। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, একদিকে বাতাসে আগুনের হলকা, অপরদিকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা- দুই মিলে হাহাকার চলছে দেশজুড়ে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষজন। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ঘরেও টিকতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুতের ঘাটতিতে অনেক এলাকায় সেচকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে।


এদিকে গ্যাসের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি উত্তরণের কোনো সুখবর নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খরতাপের কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে। গ্রামে কমাতে হলে শহরে লোডশেডিং দিতেই হবে।


বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনা নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে বৈঠক হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, লোড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে। এখন থেকে শহরেও যৌক্তিক লোডশেডিং দেওয়া হবে। পাশাপাশি বড় বিপণিবিতান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়ে সাশ্রয়ী নীতি নেওয়া হবে। রাত ৮টার পর মার্কেট বন্ধের নিয়ম কঠোরভাবে মানা হবে।


ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, অফিশিয়ালি এখনো লোডশেডিং শুরু হয়নি। তবে বর্তমানে ঢাকায় ৪০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট ঘাটতি আছে বিদ্যুতের। যে কারণে কিছু এলাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে এভাবে গরম পড়তে থাকলে শহরেও যৌক্তিক লোডশেডিং করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে সারা দেশে লোডশেডিং সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডেই (আরইবি) প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।


আরইবির সমিতিগুলোর একাধিক জেনারেল ম্যানেজার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চরম আতঙ্ক নিয়ে তারা গ্রামে থাকছেন। রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারেন না। বিদ্যুৎ না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী কখন তাদের ওপর হামলা চালায়, এ ভয়ে তারা দিন কাটাচ্ছেন। তাদের মতে, চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎও তারা পাচ্ছেন না। গ্রাম এলাকায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনের কারণে প্রতিটি গ্রামে এখন স্থানীয় সংসদ-সদস্যরা অবস্থান করছেন। তাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার চাপ আছে। এছাড়া আরও ভিআইপি আছেন। এসব করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম কষ্ট দিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি অর্থ সংকটে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় যে কোনো সময় ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয়ও লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।


বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ঢাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের (এসি) ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। ঢাকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র সংযোজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ১০ থেকে ১৫ দিন তাদের হাতে কোনো শিডিউল নেই। আগে তারা প্রতিদিন ১০-১২টি এসি সংযোজন করলেও এখন প্রতিদিন ২৫-৩০টি এসি সংযোজন করতে হচ্ছে। 


বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরে দিনে-রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বিদ্যুৎ যাওয়ার তথ্য মিলেছে। এরকম গরম অব্যাহত থাকলে এবং আনুষ্ঠানিক লোডশেডিং শুরু হলে শহরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে সোমবার রাত ৯টায়। এ সময় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে রোববার রাতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট।


ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান সাংবাদিকদের জানান, তার এলাকায় এখন পর্যন্ত লোডশেডিং হয়নি। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎবিভ্রাটের ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি এখনো চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। আগামী দিনের কথা বলা যাচ্ছে না।


জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। খরচ বেশি হলেও তেলচালিত কেন্দ্রগুলো চালিয়ে চাহিদা মেটানো হবে। তিনি বলেন, গরম বেশি পড়ছে। এসি-ফ্যানের ব্যবহার বেড়েছে। বিদ্যুতের লোড হুট করে বেড়ে গেছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড গরমে অনেক সময় সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হয়। এতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়।


বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান বলেছেন, তাপপ্রবাহ কমলে লোডশেডিং কমে যাবে। তার মতে, ‘চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে তাপপ্রবাহ কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এ মুহূর্তে বোরো আবাদের অঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় সমানভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। বুধবার দুপুরে জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চরে সৌরবিদ্যুতের প্ল্যান্ট স্থাপনের জায়গা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।


বিদ্যুৎ বিভাগ এপ্রিল-মে মাসে বিদ্যুতের চাহিদা ধরেছে ১৭ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোয় গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এরপরও আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতি থাকছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস বেশি সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। এখন গড়ে দিনে ১৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। গত মাসে সরবরাহ ছিল ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোয় বিদ্যুতের উৎপাদন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বেড়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বেশি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।


বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার গরমে গ্যাস থেকে ৬ হাজার, কয়লা থেকে প্রায় ৫ হাজার, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫ হাজার এবং ডিজেলের মাধ্যমে ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। রোববার রাতে ১৫ হাজার ৬৬ মেগাওয়াট উৎপাদনের সময় গ্যাস দিয়ে ৭ হাজার ৭১৬, তেল ব্যবহারে ২ হাজার ৯৫৯ এবং কয়লা দিয়ে ৪ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। 


বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যেসব অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে, সেসব এলাকা আমরা চিহ্নিত করছি। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে যেন কৃষকের সেচ কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে কিছুটা লোডশেডিং করেও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। দু-তিনদিনের মধ্যেই গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং পরিস্থিতি কিছুটা কমে আসবে।’


বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জোনভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যে দেখা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে এই বিতরণ কোম্পানিকে ১ হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। তবে এটি সরকারি হিসাব। বাস্তবে এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ



আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ