পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের দুই দিনের ঢাকা সফরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতার বার্তা স্পষ্ট হলেও, একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের পাওনা এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানো—এই তিনটি অমীমাংসিত বিষয়েই গতি আসেনি। বরং আলোচনার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে সমাধানের আশ্বাসেই আটকে আছে প্রক্রিয়া।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হয়, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি।
বৈঠক শেষে দুই দেশের পক্ষ থেকেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা হলেও, ইসহাক দারের মন্তব্যে একাত্তরের প্রসঙ্গ আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসে। তিনি দাবি করেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তির মাধ্যমেই এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে এবং সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত।
এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "আমি একমত না। একমত হলে তো সমস্যাটা সমাধান হয়ে যেত তাদের মতো করে, তাই না?"
তিনি জানান, বাংলাদেশ এখনো চায়—পাকিস্তান গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করুক, আর্থিক পাওনা মেটাক এবং আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ফিরিয়ে নিক। তবে তিনি জানান, দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করতে।
ইসহাক দারের সফরে কূটনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি রাজনৈতিক যোগাযোগও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সংযোগ অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সবকিছু ভারসাম্য রেখে হওয়া উচিত, যাতে জাতীয় স্বার্থে ক্ষতি না হয়।’’
সবকিছু মিলিয়ে এই সফর নতুন করে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক পুনঃগঠনের সূচনা হিসেবে দেখা দিলেও, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—একাত্তরের দায়মুক্তি ছাড়াই—এ সম্পর্ক কতটা দৃঢ় হবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
এদিকে, দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র তৈরির ব্যাপারে উভয় পক্ষ ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর দীর্ঘ ১৩ বছর পর হলেও, তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে আপস নয়—এমন মনোভাব রেখেই এগিয়ে যেতে চায় ঢাকা।