ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অনবদ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পর্যটনকেন্দ্র পহেলগামে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৈসারন উপত্যকায় তিনজন সশস্ত্র হামলাকারী পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, এই হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
বিশ্বস্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ২০ জন নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপরদিকে বিবিসি জানায়, তাদের সঙ্গে কথা বলেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, যারা জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২০ জনের বেশি হতে পারে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমও। আহতদের মধ্যে আরো কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দায় স্বীকার করে। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখনও স্বাধীনভাবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জরুরি ভিত্তিতে শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌদি আরবে অবস্থানকালীন টেলিফোনে আলোচনা করেন। নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছে এবং চলছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বৈসারন উপত্যকার এই নির্জন রিসোর্টে সাধারণত পর্যটকরা হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে যান। মনোরম পরিবেশ ও শান্ত প্রকৃতির কারণে এটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। এ হামলার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পর্যটকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর এমন প্রাণঘাতী হামলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
📍 মূল ঘটনা
জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মঙ্গলবার দুপুরে। হঠাৎ করেই পর্যটকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় ছয়জনের একটি জঙ্গি দল। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ২৬ থেকে ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত বহু। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ও কর্নাটকের পর্যটকরাও।
⚠️ চিহ্নিত চার জঙ্গি, প্রকাশিত ছবি
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি চার জঙ্গিকে শনাক্ত করেছে এবং তাঁদের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করেছে। তারা হল:
আদিল
আসিফ ফুজি
সুলেমান শাহ
আবু তালহা
তবে গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি, যিনি লশকর-ই-তৈয়বার শীর্ষ নেতা ও হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
🕵️♂️ হামলার পেছনের সংগঠন
এই নৃশংস হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF), যা মূলত লশকর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন হিসেবে কাজ করে। TRF-এর জন্ম ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময়।
🔫 পরিকল্পনার বিবরণ
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে:
প্রথমে আইইডি বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল
পরে সেটি বাতিল করে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে হামলা চালায়
গুলিবর্ষণের আগে এলাকা ঘুরে দেখে যায় তারা
ছয়জনের মধ্যে দুইজন পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
তাদের হাতে ছিল AK-47 ধাঁচের অস্ত্র, মুখে মাস্ক
🧍♂️ নিহতদের মধ্যে কর্নাটক ও পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক
কর্ণাটকের শিবমোগ্গার বাসিন্দা মঞ্জুনাথ রাও নিহত হন জঙ্গিদের গুলিতে। স্ত্রী পল্লবী ও সন্তান অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান। পল্লবীর মতে, গুলি চালিয়ে এক জঙ্গি বলেন, “তোকে মারব না। যা, মোদীকে গিয়ে বল।”
💰 সরকারি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা
জম্মু ও কাশ্মীর সরকার জানিয়েছে:
নিহতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা
গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ টাকা
কম গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে
তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার
এই হামলার পরে সৌদি আরব সফর মাঝপথে শেষ করে দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাতেই কাশ্মীরে পৌঁছান এবং পরদিন সকালে নিহতদের শ্রদ্ধা জানান ও পরিজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন শাহ।