ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

চমেক হাসপাতালে চার মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ধর্ষণের শিকার ১৪৮ নারী-শিশু

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০.২৩ অপরাহ্ন

আপডেট : রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০.২৩ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 880624 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 880624 জন
চমেক হাসপাতালে চার মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ধর্ষণের শিকার ১৪৮ নারী-শিশু
ছবি : সংবাদদাতা প্রেরিত।

চট্টগ্রামে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজনদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশী। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত চার মাসে ধর্ষণের শিকার ১৪৮ নারী ও শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। 


বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীদের দ্রুত বিচার না হওয়া এবং সামাজিক প্রতিরোধ দুর্বল থাকায় ধর্ষণের ঘটনা লাগামহীনভাবে বাড়ছে।অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবারের নিকটজন, প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়দের দ্বারাই ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে। যা সামাজিকভাবে ভুক্তভোগীদের জন্য আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করছে।


নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগ এবং ভুক্তভোগীদের মানসিক সহায়তা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমার সম্ভাবনা কম।


নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ভাষ্য, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা যেন সহজে আইনি ও চিকিৎসা সহায়তা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক লজ্জা বা ভয় কাটিয়ে তাদের সামনে আসার জন্যও সঠিক পদক্ষেপ দরকার।  বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেবল আইনগত ব্যবস্থা নিলেই সমস্যার সমাধান হবে না, ধর্ষণের মতো অপরাধ কমাতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।


জানতে চাইলে এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম বলেন, এই আইনের সংস্কার করতে হবে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেটা বন্ধ করতে হবে। আইনে যে সবোর্চ্চ শাস্তির কথা বলা হয়েছে সেটা হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। সেটা প্রিয়জন আর প্রতিবেশী যেই হোক। ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য একেবারে রুট লেভেল থেকে রাষ্টের সবোর্চ্চ পর্যায়ে পজিটিভ ভূমিকা থাকতে হবে।


তিনি আরও বলেন, মোবাইলে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি পুরুষ যে বয়সের হোক না কেন-তাদের ভোগবাদী প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না আর তখন অবুঝ অসহায় শিশুরা আক্রান্ত হয়। সোজা কথায় এই বিষয়টি এখন অশনিসংকেত। সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এটি বন্ধ করার জন্য নীতিনির্ধারণীদের আন্তরিক হওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে এসেছে ১৪৮ জন নারী ও শিশু। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ওসিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছে ৩৬ জন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ জনে। আর চলতি মাসের ২৫ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে এসেছে ৩১ জন।


এদিকে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও অনেক ভুক্তভোগী হাসপাতালে ভর্তি হন না বা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। তবু যেসব ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, তার পরিসংখ্যানই ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।


এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, আগের চেয়ে সম্প্রতি ধর্ষণের কেস বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর প্রথমে অনেকেই জরুরি বিভাগে আসে, এরপর আমরা ওসিসিতে রেফার করি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ভিকটিম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই চলে যায়, ভর্তি হয় না। এ কারণে পরিসংখ্যানে হয়তো প্রকৃত চিত্র পুরোপুরি উঠে আসে না।

চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, ধর্ষণের শিকার অনেক নারী ও শিশু সামাজিক লজ্জা, ভয় এবং পারিবারিক চাপের কারণে চিকিৎসা সেবা ও আইনি প্রক্রিয়ার পুরোটা সম্পন্ন করতে পারেন না। বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চলে যান, তারা বিচার প্রক্রিয়ায়ও খুব একটা এগোতে পারেন না।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওসিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে ধর্ষণের ঘটনায় আসা বেশির ভাগ কেসে দেখা যায় বিয়ের আশ্বাসে কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করা হয় বলে তারা জানান। এমনও ঘটনা আছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়ে শিশুদের প্রেম, বিয়ে ও ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে ধর্ষণ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুদেরও ধষর্ণ করা হচ্ছে।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম
রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০.২৩ অপরাহ্ন
আপডেট : রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০.২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ