ঘোষণার মাত্র ৭২ ঘণ্টার মাথায় মধ্যপ্রাচ্যে ফের উথালপাতাল! ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে সরাসরি সামরিক অভিযানে নামল আমেরিকা। রবিবার ভোরে (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী) ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুকেন্দ্র— ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান —এ ভয়াবহ বোমাবর্ষণ চালানো হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে ট্রুথ সোশ্যালে দাবি করেন, এটি ছিল "একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত" এবং এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে আমেরিকার সবচেয়ে আধুনিক ও ধ্বংসাত্মক অস্ত্র—বাঙ্কার বাস্টার’ (GBU-57) এবং বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান।
ঘটনার প্রেক্ষাপট: কথা ছিল দু’সপ্তাহ, বাস্তবে হামলা ৭২ ঘণ্টায়! মাত্র তিন দিন আগে হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, **“ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত নিতে দু’সপ্তাহ সময় নিচ্ছি।”** অথচ ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আকাশপথে ইরানের ভিতরে ঢুকে মার্কিন বাহিনী চালিয়ে দেয় অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একপ্রকার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যাতে কোনও গোপন প্রস্তুতি না নিতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকেই আমেরিকা হয়তো পরিকল্পনামাফিক সময়ের আগে হামলা চালিয়েছে।
হামলার লক্ষ্য: কেন এই তিন পরমাণুকেন্দ্র?
১. ফোরডো পরমাণুকেন্দ্র
অবস্থান: তেহরান থেকে ১০০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, একটি পাহাড়ের নিচে
বিশেষত্ব: সবচেয়ে সুরক্ষিত কেন্দ্র; মাটির ৩০০ ফুট গভীরে
কার্যক্রম: ৬০% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন হয় এখানে
হামলা: ছয়টি GBU-57 বাঙ্কার বাস্টার বোমা ফেলা হয়, যা মাটির নিচে ২০০ ফুট পর্যন্ত ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম
২. নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্র
অবস্থান: ইরানের কেন্দ্রীয় মালভূমিতে
বিশেষত্ব: ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধকরণের ‘মুকুট’ হিসেবে পরিচিত
হামলা: মাটির উপরের স্থাপনায় ইজ়রায়েল ও আমেরিকার যৌথ হামলায় প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতি
৩. ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্র
অবস্থান: তেহরান থেকে ৩৫০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে
বিশেষত্ব: চিনের সহায়তায় নির্মিত বৃহত্তম পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র
হামলা: বি-২ বোমারুর পাশাপাশি মার্কিন নৌবাহিনীর টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত
টেকনোলজির দিক থেকে: ব্যবহৃত অস্ত্র কতটা ভয়াবহ?
GBU-57 'Massive Ordnance Penetrator' (MOP): মাটি ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫ টনের বিশাল বোমা।
B-2 Spirit Bomber: অদৃশ্য প্রযুক্তিতে তৈরি বোমারু বিমান, যেটি শত্রুর রাডার এড়িয়ে দীর্ঘপথে নিখুঁত হামলা চালাতে পারে।
Tomahawk Cruise Missile: সমুদ্রে ভেসে থাকা যুদ্ধজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য, লক্ষ্যভেদে অত্যন্ত নিখুঁত।
ইরানের জাতীয় পরমাণু নিরাপত্তা কেন্দ্র জানিয়েছে, কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছে না, সাধারণ জনগণ নিরাপদে রয়েছেন। তেহরান সরকার এই হামলার সত্যতা স্বীকার করেনি। বরং স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, হামলার ঠিক আগেই ফোরডোতে বিপুল তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল— সেখান থেকে সরানো হচ্ছিল গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম।
ট্রাম্প জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, “আরও অনেক লক্ষ্য বাকি রয়েছে। এখনই ইরান শান্তির পথে না হাঁটলে আরও বৃহত্তর ও প্রাণঘাতী হামলা চালানো হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সব নজর ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। তারা কি আলোচনার টেবিলে ফেরে, নাকি সামরিক প্রতিশোধের পথে হাঁটে?
ট্রাম্পের কথিত ‘দু’সপ্তাহের কৌশল’ আসলে কি ছিল "Distraction Doctrine" সময়ের আগেই হঠাৎ আক্রমণ চালিয়ে ইরানকে চাপে ফেলাই কি ছিল মূল লক্ষ্য? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কূটনৈতিক মহলে।