কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পূর্ব মথরামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আল আমিন মিয়া হিসাব খুলবেন বলে রবিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে যান আইএফআইসি ব্যাংক কুলিয়ারচর উপশাখায়। তখনো ব্যাংকের কর্মরত ব্যক্তিরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বিশেষ প্রয়োজনে আল আমিন ব্যাংকের বাইরে যান। ২০ মিনিট পর এসে দেখেন কেউ আর চেয়ারে বসে নেই, অচেতন হয়ে পড়ে আছেন।
পুলিশ বলছে, উপশাখাটির ভেতরে ছিল বিষাক্ত রাসায়নিকের গন্ধ। আইএফআইসি ব্যাংক কুলিয়ারচর উপশাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে অচেতন হয়ে পড়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ইস্যুটি নিয়ে বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন। ব্যাংক লুটের ভাবনা থেকে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র কর্মরত ব্যক্তিদের অচেতন করে থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের নেতৃত্ব দেন ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, ব্যাংকের ভল্ট ও ক্যাশবাক্স ঠিক পাওয়া গেছে। এখনো মোটিভ স্পষ্ট নয়। তবে ব্যাংকের ভেতরে বিষাক্ত রাসায়নিকের গন্ধ ছড়িয়ে ছিল।
গন্ধ খুবই তিক্ত। প্রাথমিক তদন্ত শেষে মনে হচ্ছে বিষাক্ত কোনো গ্যাসের গন্ধ থেকে অসুস্থতার কারণ হতে পারে। চিকিৎসকরাও এমনটাই মনে করছেন। ব্যাংক বন্ধ থাকায় এখনো সিসি ফুটেজ দেখা সম্ভব হয়নি। ফুটেজ দেখা গেলে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখার কার্যালয় থানা সড়কের হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায়। তিন বছর আগ থেকে শাখাটির কার্যক্রম বাজিতপুর উপজেলা মূল শাখার অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। শাখাটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছয়জন। অচেতন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো গ্রাহক নেই।
ছয়জনের মধ্যে শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান ও নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। অন্যদের নেওয়া হয় জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে ব্যবস্থাপক ও নিরাপত্তাকর্মীকেও পাঠানো হয় জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কর্মরত ব্যক্তিদের অসুস্থতার খবর পেয়ে বাজিতপুর শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা এসে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। পরে ব্যাংকটি দিনের লেনদেন স্থগিত করে তালাবদ্ধ করে রাখেন।
অসুস্থ হওয়ার পর চারজনকে নেওয়া হয় জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। স্থানীয় লোকজন এই কাজে সহযোগিতা করেন। অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন কামরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি হুসনে আরা নামে ব্যাংকের একজনকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। হুসনে আরার কিছুটা জ্ঞান ছিল। কিন্তু কোনো কথা গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না। অস্থিরতা দেখাচ্ছিলেন।’
কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা ফাতেমাতুজ জোহরা অসুস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা–কর্মচারীদের খোঁজ রাখছেন। তিনি বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি প্রথমে বমি করতে করতে সবাই চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরে তাঁদের অক্সিজেন লেবেল কমতে শুরু করে। দ্রুত অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়।’
ঘটনাটি ডাকাতির চেষ্টা কি না, এমন প্রশ্নে ইউএনও জানালেন, অসুস্থ ব্যক্তিদের জ্ঞান ফিরতে শুরু করেছে। তবে কথা বলার পর্যায়ে নেই। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা গেলে এবং তদন্ত শেষ করার পর সবকিছু পরিষ্কারভাবে বলা যাবে।
অসুস্থ শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান ও নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেনকে চিকিৎসা দেন কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আদনান আক্তার। তিনি বলেন, ‘শাখা ব্যবস্থাপকের কিছুটা জ্ঞান ছিল। বমি করছিলেন। কোনো কিছুই সঠিকভাবে বলতে পারছিলেন না। আমাদের ধারণা, চেতনানাশক কিংবা অজ্ঞাত কোনো ওষুধের প্রভাবে এমনটা হতে পারে।’