সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও রাত্রিযাপন সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার দাবিতে কক্সবাজার শহরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সেন্ট মার্টিনের অধিবাসী ও পর্যটনসংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে তারা গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে শহরের কলাতলীতে প্রধান সড়কে টানা দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এ সময় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও মেরিন ড্রাইভে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে তারা অবরোধ তুলে নেন।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা বলে দাবি করলেও কক্সবাজারের পরিবেশবাদীদের দাবি, সড়ক দখল করা আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা নন। কিছু হোটেল ব্যবসায়ী কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের ভাড়ায় নিয়ে এসেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কলাতলীর প্রধান সড়কের ‘জ’ ভাস্কর্য (ডলফিন মোড়) ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। কেউ কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়েছেন। কেউ বসে ও দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আবার কেউ বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল করছেন।
আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন আবদুল মালেক জানান, এই আন্দোলনে অংশ নিতে সেন্ট মার্টিন থেকে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু এসেছে। একই সঙ্গে পর্যটনশিল্পে সংশ্লিষ্টসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন স্তরের মানুষও এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা সেন্ট মার্টিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও রাত্রিযাপন সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সরবে না, প্রয়োজনে মরবে।
সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশি বলেন, স্থানীয় জনগণ, দিনমজুর, কুলি, শ্রমিক, মৎস্যজীবী, পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী, হোটেল-রিসোর্ট মালিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রবল আপত্তি অগ্রাহ্য করে সরকার এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জীবন ও জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পড়ালেখা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তাই বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সড়ক অবরোধের কারণে কলাতলীর প্রধান সড়ক ও মেরিন ড্রাইভে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল ও পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং তারা সড়ক অবরোধ তুলে নিতে আহ্বান জানান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাদের আহ্বান গ্রাহ্য করেননি।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা মুফিজুর রহমান বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণে বিধি-নিষেধ পুনর্বিবেচনা চাই, তবে এভাবে রাস্তা বন্ধ করে পর্যটকদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোনো আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়াটে লোক এনে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করানো হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। মূলত কতিপয় হোটেল মালিক এই আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের উসকানিমূলক পরিকল্পিত আন্দোলন কক্সবাজারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এতে করে কক্সবাজারে পর্যটকও কমে যাচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ামিন হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আন্দোলনকারীদের একটা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে জেলা প্রশাসক বসেছিলেন। এ সময় তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে তাদের দাবিদাওয়া উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বৈঠকের পরপরই আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।
এদিকে এই আন্দোলনকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। আসাফউদ্দৌলা আশেক নামের একজন লিখেছেন, জীবন-জীবিকার অধিকার নিয়ে আন্দোলন করার অধিকার সবার রয়েছে।
অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক নামের একজন লিখেছেন, রাস্তা অবরোধ করে জনগণকে জিম্মি করে কিসের আন্দোলন। রাস্তায় হাজার গাড়ি আটকা পড়েছে। আন্দোলনের একটা শৃঙ্খলা থাকা উচিত।
এ এইচ সেলিম উল্লাহ নামের একজন সাংবাদিক লিখেছেন, সেন্ট মার্টিনের একদল মানুষ তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য কক্সবাজারে এসে শহরের কলাতলী, মেরিন ড্রাইভসহ শহরের একাংশের মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। তাদের সড়ক অবরোধের কারণে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও হাসপাতালগামী রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জরুরি কাজে শহরের একপাশ থেকে অপর পাশে চলাচল করতে পারছে না। এটা আন্দোলনকারীদের একটি ক্রাইম। ওরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বাধাহীন বা স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, অধিকার লঙ্ঘন করছে। সেন্ট মার্টিন কি কলাতলী থানার অধীনে নাকি যে এখানে এসে কর্মসূচি পালন করতে হবে? নিশ্চয় কলাতলীর কেউ তাদের ইন্ধন দিচ্ছে। নব্য নেতা হওয়ার খায়েশ! এই ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এইচ এম নজরুল ইসলাম লিখেছেন, জীবনে যারা সেন্ট মার্টিনে যায়নি তারাও দেখি সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা পরিচয়ে আন্দোলন করছে।