ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চ: গত ৫৩ বছরে এদেশে হিন্দু নির্যাতন, খুনের বিচার হয়নি !

🛑 জেলায় জেলায় মহাসমাবেশের ঘোষনা।
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো ।।
নিউজটি দেখেছেনঃ 1649209 জন
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1649209 জন
চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চ: গত ৫৩ বছরে এদেশে হিন্দু নির্যাতন, খুনের বিচার হয়নি !
চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের গণসমাবেশের -ছবি।


বিগত ৫৩ বছরে এদেশে হওয়া হিন্দু নির্যাতন, খুনের কোনো বিচার হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘি মাঠে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের গণসমাবেশে এমন মন্তব্য করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশব্যাপী মন্দির, হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগের প্রতিবাদে এবং ৮ দফা দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণসমাবেশে যোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এদিকে, গণসমাবেস্থল থেকে প্রতিটি জেলায় মহাসমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে সনাতন জাগরণ মঞ্চ। 


গণসমাবেশে চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা থেকে সনাতনীরা মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এতে লালদিঘির মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গণসমাবেশ হয়ে ওঠে লোকেলোকারণ্য।


বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সনাতনীরা শুধু অবহেলিত ছিল। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্য বদলায় না। যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা সনাতনীদের দুঃখ দুর্দশাকে লুকানোর চেষ্টা করে। সনাতনীদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়, নির্যাতন লুকিয়ে স্বাভাবিকতার কথা বলে। গত ৫৩ বছরে এদেশে হওয়া হিন্দু নির্যাতন, খুনের কোনো বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার এই ধরণের ঘটনা করতে উৎসাহিত হয়েছে। প্রতিবার ভোট পরবর্তী বা ক্ষমতার পালাবদলের সময় নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে হিন্দুদের ওপর। সেটা কেন হবে? কারা দোষী? কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত? তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলেতো বেরিয়ে আসবে কারা সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে জড়িত? কেন সরকার সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছে না।


বক্তারা আরো বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা দুর্গাপূজায় ১ দিন ছুটি বাড়িয়েছে। তবে সেটি পর্যাপ্ত নয়। আমরা চেয়েছি ৫ দিনের ছুটি। সেখানে ২দিন ছুটি কেন? যেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে এদেশের ছাত্র জনতা প্রাণ দিয়েছে সেখানে আবার বৈষম্য হবে কেন? ক্ষতিগ্রস্ত সনাতনীদের ক্ষতিপূরণ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করার কথা বলেছে সরকার। এটি খুবই ইতিবাচক। খুব দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া ৮ দফা দাবি মেনে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। এই সরকার যদি সনাতনীদের ৮ দফা মেনে নেয়। তবে সনাতনীরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। সনাতনীরা আন্দোলন সংগ্রাম করতে জানে, অধিকার আদায়ও করতে জানে। প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি যেন সনাতনীদের জন্য শান্তির একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারে সেই আশা করবো আমরা।


দুপুরের পর থেকে লালদিঘীর মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সনাতনীরা ‘একদফা একদাবি ৮ দফা মানতে হবে’, ‘প্রশাসন নীরব কেন? জবাব চাই দিতে হবে’, ‘আমার মায়ের কান্না... বৃথা যেতে দিব না’, ‘আমার দেশ সবার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘অমার মাটি আমার মা, এই দেশ আমরা ছাড়বো না’, ‘রক্তে আগুন লেগেছে, সনাতনীরা জেগেছে’, ‘আমার ঘরে আগুন কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘হিন্দুদের উপর হামলা কেন? জবাব চাই, দিতে হবে’, ‘বৈষম্যহীন বাংলায়, সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তো বাপ-দাদার’, ‘লাখো শহীদের বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই লড়াই করে বাঁচতে চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। 


বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে এবং স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ তপনান্দ গিরি মহারাজ, পটিয়া পাচোরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, তপোবন আশ্রমনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজসহ সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।


আট দফা দাবিগুলো হলো, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শান্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্থদের যথাপোযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করতে হবে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টিকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ করতে হবে। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড, আধুনিকায়ন করতে হবে। শারদীয় দুর্গাপুজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো ।।

আপডেট :
সর্বশেষ সংবাদ