বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হলো রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সম্প্রতি জাতীয় সংবাদমাধ্যম মানবজমিন -কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগের আগে তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাননি। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানও নিশ্চিত নয় যে শেখ হাসিনা সত্যি পদত্যাগ করেছেন কি না? রাষ্ট্রপতির দাবি, তিনি বিষয়টি নিয়ে ওয়াকারের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন, তবে ওয়াকারও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন ৫ আগস্ট। তার পর থেকে প্রায় আড়াই মাস অতিক্রান্ত। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছিলেন, হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু হাসিনা-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের দাবি ছিল, তাঁর মা দেশ ছাড়ার আগে পদত্যাগ করেননি। মাঝে আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারও গঠন হয়েছে। কিন্তু হাসিনা কি আদৌ পদত্যাগ করেছিলেন? প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে এসেও সেই বিতর্কের অবসান হলোনা! বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের দাবি, হাসিনা পদত্যাগ করেছেন— এমন কোনও প্রামাণ্য নথি তাঁর কাছে নেই। রাষ্ট্রপতি এও জানান, ৫ আগস্ট সকালে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে হাসিনার আগমনের প্রস্তুতি নিলেও, এক ঘণ্টার মধ্যে জানানো হয় যে হাসিনা আসছেন না। তার এই সাক্ষাৎকার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
দেশের সংবাদপত্র ‘মানবজমিন’-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিতে হয়। যে মুহূর্তে ইস্তফা দেবেন, তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর ফাঁকা হবে। সম্প্রতি ওই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, ৫ অগস্ট সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বঙ্গভবনে (রাষ্ট্রপতির বাসভবন) ফোন এসেছিল। তখন বলা হয়েছিল, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বঙ্গভবনে আসবেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল বঙ্গভবনে। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যেই আবার ফোন এসেছিল। দ্বিতীয় ফোনে জানানো হয়েছিল, শেখ হাসিনা আর বঙ্গভবনে যাচ্ছেন না।
সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে আরো উঠে আসে, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে তাঁকে কিছুই জানাননি। সেনাপ্রধান ওয়াকারকেও তিনি এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তবে ওয়াকারও সুস্পষ্ট ভাবে তাঁকে কিছু জানাতে পারেননি বলেই দাবি রাষ্ট্রপতির। শাহবুদ্দিনের কথায়, ওয়াকারও জানিয়েছিলেন যে তিনি শুনেছেন হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তবে সেটি হাসিনা রাষ্ট্রপতিকে জানানোর সময় পাননি বলেই অনুমান ছিল ওয়াকারের। পরবর্তীকালে মন্ত্রিপরিষদের এক সচিব রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলেন হাসিনার পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহের জন্য। তখনও রাষ্ট্রপতি ওই সচিবকে কোনও নথি দিতে পারেননি। রাষ্ট্রপতি সে সময় জানিয়েছিলেন, তিনিও খুঁজছেন।
তবে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই বিষয়ে বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গিয়েছিলেন, এটাই সত্য। তবে, পদত্যাগপত্রের অভাবে সাংবিধানিক শূন্যতা মোকাবেলার জন্য গত ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। জানানো হয়েছিল, সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এই পদক্ষেপ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের আগামী সংসদীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে, এই বিতর্কের উপর নজর রাখা প্রয়োজন, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন দিকে মোড় দিতে পারে।
উল্লেখ্য, দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সাথে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎকারের কথোপকথনটি গতকাল রবিবার পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়েছে।