ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

মহান বিজয় দিবস: ৫৪ বছরে পদার্পণ বাংলাদেশ

‘বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন’
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

লালসবুজ বাংলাদেশ রিপোর্ট | বিশেষ প্রতিবেদন
ঢাকা
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১.৪২ পূর্বাহ্ন

আপডেট : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১.৪৯ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1267546 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1267546 জন
মহান বিজয় দিবস: ৫৪ বছরে পদার্পণ বাংলাদেশ
সংগৃহীত ছবি।

আজ ১৬ ডিসেম্বর, স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪তম মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যান্ত গ্রাম পর্যন্ত নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। আজকের দিনটিতে ‘বাংলাদেশ’ বিজয়োল্লাসে ভাসবে।বাঙালী জাতি আনন্দে উদ্বেলিত হবে।


দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল। 


যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ পত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ  পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।


দিনটিতে সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্র, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা আয়োজন করবে। ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে, দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।


এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। এ ছাড়া দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয় মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) এবং শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে কর্মসূচি নেওয়া হবে। 


মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিতে রয়েছে– আজ ভোরে দলীয় সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৭টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও সেখান থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ‘সর্বজনীন কনসার্ট’। এ উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ এবং নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আলোকসজ্জা করা হবে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে রয়েছে– সকাল ১০টায় দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে থেকে এবং মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বিজয়নগর থেকে বিজয় র‌্যালি। 


এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন দল ও তাদের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।


বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম: এক ঐতিহাসিক যাত্রা

বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন পাকিস্তানের শাসন ও শোষণের অধীনে নিপীড়িত ছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বিজাতি  তত্তে¡র ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তাান রাষ্ট্রের শৃঙ্খলে বাঙালি জাতি আবদ্ধ হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালির ওপর বৈষম্য, শোষণ ও অত্যাচার শুরু হয়। এই শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি একে একে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং নানা আন্দোলন গড়ে তোলে।


শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ নিজেদের অবস্থান থেকে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকে। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ন্যায্যতা ও রাজনৈতিক মুক্তির দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়। বিশেষত, বাংলা ভাষার প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন, যে আন্দোলনে রক্ত দেওয়া হয়, তা জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে প্রেরণা যোগায়। এই আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হিসেবে সামনে এসে দাঁড়ান শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাঙালির সংগ্রামকে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত করেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা নিরস্ত্র বাঙালির বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাতে শুরু করলে ২৬ মার্চ, প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা আসে। এভাবেই শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।


মুক্তিযুদ্ধের সূচনা থেকেই পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাজাকার, আল বদর, আল সামস বাহিনী তাদের দোসর হিসেবে এই নির্যাতনে অংশ নেয়, যা জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকে। তবে, এই ভয়াবহ নির্যাতনের মধ্যেও বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অবিচল থেকে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যায়।


১৬ ডিসেম্বর: বিজয়ের ইতিহাস

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়ার পর, পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে শুরু হয় বাঙালি জাতির রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে, বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে ১৬ ডিসেম্বর, যখন পাকিস্তানি সেনারা পরাজয় মেনে নেন। 


এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় সূচনা হয়। বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন, স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও সাহসিকতার মাধ্যমে এই বিজয় সম্ভব হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দেশের জনগণের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতও সক্রিয় সহযোগিতা প্রদান করে। কোটি কোটি বাঙালি আশ্রয় নেয় ভারতে, আর ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে সরাসরি সহায়তা প্রদান করে।তৎকালীন বিশ্বশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের বিরদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র যখন পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়, বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে। এই আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মুক্তিযুদ্ধের পেছনের দৃঢ় সংগ্রাম বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করতে থাকে। 


অবশেষে, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান), পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সেদিন বিজয়ের পর, বাঙালি জাতি জয়ী হয়ে বীর এবং একটি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সূচনা করে। 


এদিনে, ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এটি বাঙালির বিজয়ের, সংগ্রামের এবং অসীম ত্যাগের প্রতীক। আজও এই দিনটি বাংলাদেশের মানুষ গভীর শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে, সেই মহতী সংগ্রামের জন্য যারা প্রাণ দিলেন, তাদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারা ইতিহাসের প্রাণ, বাঙালি ও বাংলা’র মানুষের হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবে চিরকাল।



নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

লালসবুজ বাংলাদেশ রিপোর্ট | বিশেষ প্রতিবেদন
ঢাকা
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১.৪২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১.৪৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ