ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

পাকিস্তানে থানায় আগুন, পর্যটককে টেনে নিয়ে হত্যা

ধর্ম অবমাননা
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ


আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1867822 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1867822 জন
পাকিস্তানে থানায় আগুন, পর্যটককে টেনে নিয়ে হত্যা
ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় ৩৬ বছর বয়সী এক পর্যটককে পুলিশ স্টেশন থেকে টেনে নিয়ে হত্যা এবং দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোয়াত জেলার জনপ্রিয় পর্যটন শহর মাদিয়ানে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে।

মাদিয়ান শহরে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনকে অবমাননা করার অভিযোগ আনার পর জনগণ জড়ো হয়েছিল বলে জানা গেছে।
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। এ ধরনের অভিযোগের পর দেশটিতে দাঙ্গা বা অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা একটি সাধারণ বিষয়। কোরআনের পাতা পোড়ানোর অভিযোগে গত মাসে একজন খ্রিস্টান ব্যক্তি হামলার শিকার হন। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান।


সোয়াতের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তি পাঞ্জাবের শিয়ালকোটের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে লোকটি কী করেছে তা স্পষ্ট নয়। তার পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মাদিয়ানের প্রধান বাজার থেকে পুলিশ লোকটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জনগণ তাকে হস্তান্তর করার দাবি তোলে।

সর্বশেষ ঘটনার ভিডিও পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, লোকটির দেহ রাস্তায় প্যারেড করে নিয়ে যাওয়ার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ নিশ্চিত করেছে, ওই পর্যটক ‘অগ্নিদগ্ধ’ হয়েছেন এবং এই ঘটনায় প্রায় ১১ জন আহত হয়েছে।


মালাঙ্কন্দ বিভাগের আঞ্চলিক পুলিশপ্রধান মোহাম্মদ আলি গন্ডাপুর অভিযোগ করেছেন, পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর স্থানীয় মসজিদ থেকে মানুষকে জড়ো হতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি গ্রীষ্মে জনপ্রিয় সোয়াত উপত্যকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আহতদের মধ্যে আটজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন বলে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

এদিকে সোয়াত অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তা ড. জাহিদুল্লাহ বলেছেন, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে এবং অবরুদ্ধ রাস্তাগুলো খালি করতে পুলিশ একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। থানা ও পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই ঘটনায় জড়িত শত শত মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যার মধ্যে অনেকের বয়স ১৩ বছরের মতো। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঘটনার পর থেকে ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।
 

এদিকে শহরের হোটেলগুলো পরিপূর্ণ হলেও পর্যটকরা এখন চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।

পাকিস্তানে ব্রিটিশদের তৈরি ১৯ শতকের একটি আইনে ধর্ম অবমাননাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আশির দশক থেকে এ অপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড। এর পর থেকে দেশটিতে ধর্মসংশ্লিষ্ট সহিংসতা বেড়েছে। এমনকি ভিত্তিহীন অভিযোগও অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে। মানবাধিকার সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, দেশটির সংখ্যালঘুরা প্রায়ই অভিযোগের লক্ষ্যবস্তু হন। পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় ৯৬ শতাংশই মুসলিম। ইরান, ব্রুনেই, মৌরিতানিয়াসহ অনেক দেশেই ধর্ম অবমাননার সাজা মৃত্যুদণ্ড।
 

সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস অনুসারে, ১৯৮৭ সাল থেকে দুই হাজারেরও বেশি মানুষের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগের কারণে কমপক্ষে ৮৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ



আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ